রমজানের জন্য চিনি-ছোলা-তেল আমদানির অনুমতি
আগামী রমজান মাসকে সামনে রেখে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশর (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের মধ্যে স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন পণ্য তুলে দেবে সরকার। এ লক্ষ্যে ৫ হাজার টন চিনি, ৬ হাজার টন ছোলা এবং ৩২ লাখ ৬০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ২১৫ কোটি ৭৫ লাখ ৯ হাজার টাকা।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদেও সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
বৈঠক শেষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, সার, ছোলা, চিনি ও সয়াবিন তেল এই চারটি পণ্য আমদানির প্রস্তাব ছিল। এগুলোর সবগুলই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবগুলো আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। রমজান সামনে রেখে ছোলা এবং তেল আমদানি করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমার ইচ্ছা আছে কিছু দিন পরে খেজুর আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা কোনোভাবেই যাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট না হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৫ হাজার টন চিনি ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ৫ হাজার টন চিনি ক্রয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। ২টি দরপ্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এই চিনি সরবরাহ করবে। প্রতি কেজি ১২০.৯২ টাকা হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই চিনি ২০২৫ সালের পবিত্র রমজান মাসে বিক্রয় করা হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চিনি ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৪ হাজার টন।
বৈঠকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন ছোলা ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে আসন্ন রমজান মাসে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার টন ছোলা ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। ২টি দরপ্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশ করা রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান (১) ডিএসএল প্যাসিফিক প্রা. লি. অস্ট্রেলিয়া থেকে ৪ হাজার টন এবং (২) মেসার্স অস্ট-গ্রেইন এক্সপোর্ট প্রা. লি. এই ছোলা সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৯৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ১ম দরদাতা ৪ হাজার টন ছোলা সরবরাহ করতে সম্মত হয় অবিশিষ্ট ৬ হাজার টন ছোলা ২য় দরদাতা সরবরাহ করতে সম্মতি প্রকাশ করে। প্রতি টন ছোলার দাম ৮৪৯.৯৫ মার্কিন ডলার। টিসিবির গুদাম পর্যন্ত প্রতি কেজি ছোলার দাম দাঁড়াবে ১০৭.৩৯ টাকা। ওই ছোলা ২০২৫ সালের পবিত্র রমজান মাসে বিক্রি করা হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছোলা ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার টন।
সভায় স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৩২ লাখ ৬০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবি কর্তৃক ৩২ লাখ ৬০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের জন্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৩.২৫ টাকায় দরপ্রস্তাব দাখিল করে। টিইসি কর্তৃক দরপ্রস্তাবটি পরীক্ষা শেষে রেসপনসিভ হয়।
দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশ করা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি লিটার ১৬৩.১৫ টাকা হিসেবে ৩২ লাখ ৬০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ৫৩ কোটি ১৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল গড় খুচরা মূল্য ১৬৭.৫০ টাকা।
গত ২১ অক্টোবর তারিখ ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলেও তেল সরবরাহকারী কোনো প্রতিষ্ঠান দরপত্র ডকুমেন্ট ক্রয় করেনি। তাই জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এমএম/এসএম