আইএফআইসির ঋণ কেলেঙ্কারি
ভূঁইফোড় ৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা লোপাট
‘বেড়ায় ক্ষেত খায়’ গ্রাম বাংলায় এমন একটি প্রবাদ প্রচলিত। যদিও বেড়ার কাজ হলো ক্ষেতকে রক্ষা করা কিন্তু রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন কী করার থাকে অন্যদের! এমনই অবস্থা হয়েছে আইএফআইসি ব্যাংকের।
নাম পরিচয়বিহীন প্রতিষ্ঠান, নেই কোনো জামানত; ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা নেই, তারপরও কোনো ধরনের নিয়মনীতি না মেনে ভূঁইফোড় ও নামসর্বস্ব ৬ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে তিন হাজার ৩৬৭ কোটি টাকার ঋণ। আমানতকারীদের বিশাল অর্থ লোপাট করেন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। যার প্রধান সহযোগী ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
বিজ্ঞাপন
আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এ চেয়ারম্যান হলেন পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। আর এমডি ছিলেন সালমানের অন্যতম সহচর শাহ আলম সারওয়ার। পরে তিনি ব্যাংকটির উপদেষ্টা হন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়া হয়েছে সবগুলো নামসর্বস্ব। মাত্র দুই বছরের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান আইএফআইসি ব্যাংকে হিসাব খুলে ঋণ নিয়েছে। এসব ঋণের তেমন কোনো জামানত নেই। প্রতিষ্ঠানের মালিক কে, তাও জানে না ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। শুধু তৎকালীন চেয়ারম্যান ও এমডির নির্দেশনায় তাদের ঋণ দেওয়া হয়েছে। সালমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকোর বেনামি স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এসব ঋণ নিয়েছে। মূলত এসব ঋণের অর্থ সালমান এফ রহমান লোপাট করেছেন। এখন এ অর্থ ফেরত পাওয়া প্রায় অনিশ্চিত।
যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া হয়েছে ঋণ
আইএফআইসি ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের গুলশান শাখার গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ব্লুমুন ট্রেডিং লিমিটেডকে ৬০০ কোটি ও এক্সিস বিজনেস লিমিটেডকে ৫৮২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রিন্সিপাল শাখা থেকে এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ নিয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা, গ্লোয়িং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি. নিয়েছে ৬২০ কোটি, ভিস্তা ইন্টারন্যাশনাল ৪৭০ কোটি এবং স্কাইমার্ক ইন্টারন্যাশনাল ৫৪৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে।
ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গ্লোয়িং কনস্ট্রাকশন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনা করে। বাকি পাঁচ প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করে বলে নিজেদের পরিচয় দিয়েছে। তবে আমদানি ও রপ্তানির নামে ব্যবসায়িক হিসাব খোলা সত্ত্বেও তারা কোনো পণ্য আমদানি বা রপ্তানি করেনি। তারপরও আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৮৮৭, ৮৮৮, ৮৮৯ ও ৮৯১তম বোর্ড সভায় এসব ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
ইতোমধ্যে বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছে আইএফআইসি ব্যাংকের নতুন গঠিত পরিচালনা পর্ষদ।
দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, একটি অভিযোগ এসেছে। তথ্য পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তথ্য বলছে, ব্লুমুন ট্রেডিং আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখায় এ বছরের ৮ এপ্রিল হিসাব খুলেছে। দুই মাসের মাথায় চলতি বছরেরই জুনে ৬০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে তারা। এর বিপরীতে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ধনুয়া মৌজায় সাড়ে ৮ একর জমি জামানত রেখেছে। যার বাজারমূল্য ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণকাজের জন্য এ অর্থ নিয়েছে বলে জানিয়েছিল। ব্যাংকের ৮৮৮তম পর্ষদে মেয়াদি ওভারড্রাফট-এ ঋণ অনুমোদন হয়।
ব্যাংকের পর্যালোচনা বলছে, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নেই ওই প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া প্রাক্কলিত মুখ্য আর্থিক সূচকসমূহ অসন্তোষজনক হওয়া সত্ত্বেও জামানতবিহীন ঋণ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা কর্তৃক পরিদর্শন প্রতিবেদনে গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান, মেশিনারিজ ও কার্যক্রম, স্টক রিপোর্ট, সহায়ক জামানত এবং লোকবলসহ অন্যান্য বিষয়ের যথাযথ ঋণ-নিয়মাচার না মেনে শুধু কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ লোপাটের জন্য এ ঋণ প্রদান করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
ব্যাংকটির ৮৮৭, ৮৮৮, ৮৮৯ ও ৮৯১তম পর্ষদে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ওডি (অন্যান্য) ঋণের সীমা মোট দুই হাজার ৭৬৭ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। যেখানে কোনো ধরনের নিয়মনীতি মানা হয়নি।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়— ঋণ-নিয়মাচার, ঋণদান প্রক্রিয়া, গ্রাহক নির্বাচন, প্রকল্প পরিদর্শন প্রভৃতি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ না করে শুধু কাগুজে, ভূঁইফোড়, ভুয়া প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ব্যাংকে রক্ষিত আমানতকারীদের বিশাল আয়ের অর্থ লোপাটের জন্য তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সালমান এফ রহমান এবং ব্যাংকের সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী (পরবর্তী সময়ে ব্যাংকের অ্যাডভাইজার) হিসেবে শাহ আলম সারোয়ার দায়িত্বে থাকাকালে প্রচণ্ড চাপের কারণে একান্ত বাধ্য হয়ে এ গ্রাহকদের অনুকূলে ঋণ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করেন এবং একইভাবে অনুমোদিত ঋণ যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করেই গ্রাহককে ঋণ দেওয়া হয়।
জানা যায়, গ্রাহকের ঋণ আবেদন, শাখা কর্তৃক ঋণ প্রস্তাবনা প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ, পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদন ও সবশেষে সব ধরনের নিয়মকানুন উপেক্ষা করে উল্লিখিত ঋণ বিতরণসহ ইত্যাদি অস্বাভাবিক কার্যক্রম একই দিনে বা স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করা হয়। ঋণের সদ্ব্যবহার ও প্রকল্প পরিদর্শন করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঋণ বিতরণ হয়নি।
আরও পড়ুন
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, আএফআইসি ব্যাংক পিএলসির গুলশান শাখার ভুয়া, কাগুজে, ভূঁইফোড় গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ব্লুমুন ট্রেডিং লিমিটেড ও এক্সিস বিজনেস লি. এবং প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক যথাক্রমে এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ লি., গ্লোয়িং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি., ভিস্তা ইন্টারন্যাশনাল লি. এবং স্কাইমার্ক ইন্টারন্যাশনাল লি.-এর অনুকূলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দেওয়ায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং ব্যাংকের সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী (পরবর্তী সময়ে ব্যাংকের অ্যাডভাইজর) শাহ আলম সারোয়ারের দায়-দায়িত্ব নিরূপণ এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিতকরণ ও ঋণের সমুদয় অর্থ আদায় বা সমন্বয় করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার অগ্রগতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানাতে বলা হয়েছে।
ব্যাংকের ৮৮৭ ও ৮৮৯তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় প্রিন্সিপাল শাখার তিনটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে গ্লোয়িং কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি., ভিস্তা ইন্টারন্যাশনাল লি. এবং স্কাইমার্ক ইন্টারন্যাশনাল লি.-এর অনুকূলে নতুন ঋণ অনুমোদন ও বিদ্যমান ঋণসমূহের সীমা বর্ধিতকরণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে হিসাব খোলার মাত্র দেড় বছরের মধ্যে সর্বমোট ৯৬০ কোটি টাকার ওডি (অন্যান্য) ঋণের সীমা বৃদ্ধি করে ৬৭৫ কোটি টাকা থেকে মোট সীমা এক হাজার ৬৩৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।
অনুরূপভাবে, ব্যাংকের ৮৯১তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় প্রিন্সিপাল ও গুলশান শাখার দুটি গ্রাহক প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ লি. এবং এক্সিস বিজনেস লি.-এর অনুকূলেও সর্বমোট ৫০০ কোটি টাকার ওডি (অন্যান্য) ঋণের সীমা বৃদ্ধি করে ৬৩২ কোটি টাকা থেকে মোট সীমা ১১৩২ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।
অর্থাৎ পাঁচটি গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রদত্ত ওডি (অন্যান্য) ঋণের সীমা মোট দুই হাজার ৭৬৭ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। আমদানি-রপ্তানির নামে ব্যবসায়িক হিসাব খোলা সত্ত্বেও গ্রাহক কর্তৃক কোনো পণ্য আমদানি বা রপ্তানি করা হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব বিতর্কিত ঋণসমূহের প্রস্তাবনা তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করে এবং সংশ্লিষ্ট শাখা কোনো স্থায়ী জামানত গ্রহণ বা বন্ধকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে এসব ঋণ বিতরণ করে। ঋণ নিয়মাচার বা ঋণশৃঙ্খলা পরিপালন না করে ঋণ প্রদানে আমানতকারীদের অর্থ লোপাটের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত পরিদর্শক, প্রস্তাবক, অনুমোদনকারী, প্রধান কার্যালয় এবং শাখা অফিসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনোভাবে এ অনিয়মের দায় এড়াতে পারেন না।
এমন অবস্থায় জরুরিভাবে এসব দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শাহ আলম সারোয়ারকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
৪ সেপ্টেম্বর ভেঙে দেওয়া হয় আইএফআইসির বিতর্কিত পর্ষদ
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আদেশে সালমান এফ রহমানের দখলে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চারজন স্বতন্ত্রসহ ৬ পরিচালক নিয়োগ দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করে দেওয়া হয়েছে।
আইএফআইসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো আদেশে বলা হয়, আমানতকারী, ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।
নতুন পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবতাদুল ইসলাম, ব্র্যাক ব্যাংকের অধ্যাপক সাজ্জাদ জহির, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট কাজী মো. মাহবুব কাশেম, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা ও যুগ্ম সচিব মনজুরুল হক। শেষ দুই পরিচালক সরকারের প্রতিনিধি, যেহেতু ব্যাংকটির ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক বাংলাদেশ সরকার।
একনজরে সালমান এফ রহমান
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি বা বেক্সিমকো যাত্রা শুরু করে। ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বেক্সিমকো উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ শুরু করে। আশির দশকে ওষুধ শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ হওয়ার পরে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে বিনিয়োগ করে।
আরও পড়ুন
এরপর প্রতিষ্ঠানটি টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ করে। ৯০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি সালমান এফ রহমান ঢুকে পড়েন রাজনীতিতে। প্রথমে 'সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আন্দোলন' নামে একটি দল গঠন করেন। পরে যোগ দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।
রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ফলে প্রথমদিকে তার ব্যবসা-বাণিজ্যের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হয়। বিশেষত ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বেক্সিমকোকে বেশ খারাপ সময় পার করতে হয়। আর ২০০৭-২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে প্রায় দুই বছর জেলে থাকতে হয়েছে।
এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি এসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেন। পরে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের অধিকারী হন।
গত ১৬ বছরে দেশের ব্যাংকিং খাত এবং শেয়ারবাজার তছনছ করে দিয়েছেন সালমান এফ রহমান ও তার বেক্সিমকো গ্রুপ। নিজের স্বার্থেই ঋণখেলাপির আইন পরিবর্তন করে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বৈধ করার চেষ্টা করেছেন তিনি।
২০১৩ সালে সালমান এফ রহমানের নির্দেশে ব্যাংকিং খাতের ঋণ পুনর্গঠন ফর্মুলা তৈরি করা হয়। এ সুযোগে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা করে নানা অপকর্ম। কমে যায় ঋণ নিয়ে ফেরত দেওয়ার প্রবণতা। এরপরেই লাগামহীনভাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এর পরিমাণ এক লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। তবে অভিযোগ রয়েছে, বাস্তবে এ ঋণের পরিমাণ প্রায় চার লাখ কোটি টাকা।
কত টাকার মালিক সালমান এফ রহমান ?
২০১৭ সালে চীনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হুরুন গ্লোবালে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথমবারের মতো উঠে আসে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের নাম। তিনি ১৩০ কোটি ডলারের মালিক ছিলেন। ওই সময় প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে এ সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হলফনামায় সম্পদের যে তথ্য দিয়েছেন সালমান এফ রহমান তাতে দেখা যায়, ঢাকা-১ আসনের সাবেক এ সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩১২ কোটি টাকার বেশি। পাঁচ বছরে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৩৬ কোটি টাকার মতো।
সর্বশেষ ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর নৌপথে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হন সালমান এফ রহমান। এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন।
এসআই/এমজে/এমএ