৫ আগস্ট-এর পর গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতার কারণে আনুমানিক ৩০০-৪০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

খন্দকার রফিকুল বলেন, এখনও অস্থিরতার কারণে গার্মেন্ট খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি নিরূপণ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে আমাদের কাছে আসা প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। যা আরও বাড়তে পারে।

রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের শিল্প ভালো নেই। বিশ্বে পোশাক আমদানি কমে আসছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি পরিমাণের দিক থেকে বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশ থেকে কমে গেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু চীন থেকে বেড়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। একইভাবে ভিয়েতনাম থেকে বেড়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ভারত থেকে বেড়েছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং কম্বোডিয়া থেকে বেড়েছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ।

ইউরোপে জানুয়ারি-জুলাই সময়ে মোট আমদানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ থেকে বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু চীন থেকে বেড়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ভারত থেকে বেড়েছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, কম্বোডিয়া থেকে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ভিয়েতনাম থেকে বেড়েছে ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং পাকিস্তান থেকে বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর তুলনামূলক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির বিচারে চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ভারতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় প্রবৃদ্ধিতে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি। যেটি এসব দেশে রপ্তানি আদেশ শিফট হয়ে যাওয়াকে ইঙ্গিত করে।

রফিকুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নির্দিষ্ট কিছু শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতার কারণে শুধু সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের প্রায় ২৫০-৩০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এলডিসি উত্তরণের কথা বলে পোশাক শিল্পের নগদ সহায়তার হার কমিয়ে আনা হয়েছে। এটি শিল্পে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি ও বিপর্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এলডিসি উত্তরণের পর অনেক মধ্যম আয়ের দেশ তাদের শিল্পের জন্য নামে-বেনামে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। যার অনেক উদাহরণ আমাদের কাছে আছে। অতএব সামগ্রিক অর্থনীতিতে পোশাকখাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রণোদনা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি। 

তৈরি পোশাক খাতে অনেক উদ্যোক্তা বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে ব্যবসায় টিকতে পারছেন না। বিজিএমইএ দীর্ঘ দিন ধরে এসব উদ্যোক্তার জন্য একটি নিরাপদ এক্সিট পলিসির দাবি জানিয়ে আসছে। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকেও আমরা এই বিষয়ে আবারও সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

গত দুই মাসে পোশাক শিল্পে দীর্ঘায়িত শ্রম অস্থিরতায় অনেক মাশুল দিতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই না এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হোক। যারা শিল্প ও অর্থনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, তাদের কঠিন আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা বরাবরই আমাদের শ্রমিক ভাইবোনদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সেই অবস্থান থেকেই আমরা শত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়েছি। এরপরও যদি পোশাক খাতে নৈরাজ্য চলে বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তবে তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সবাইকেই নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আরএইচটি/এসএম