বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলম বা এস আলমের দুই পুত্র আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলমকে অবৈধ সুবিধা দিতে গিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হন অতিরিক্ত কর কমিশনারসহ তিন আয়কর কর্মকর্তা।

ঘুষ নেওয়া ও দুর্নীতি করার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া সেই তিন কর্মকর্তার দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।

আইআরডির সিনিয়র সহকারী সচিব নুসরাত জাহান নিসু সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিনকে দেওয়া চিঠিতে ঘটনার সাথে জড়িত রাজস্ব ফাঁকির বাইরে অন্যান্যদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। একই ঘটনায় রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের কর অঞ্চল-১ মোহাম্মদ সাইফুল আলম বা এস আলমের দুই পুত্র আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলমের অপ্রদর্শিত ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করতে ৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তিন কর্মকর্তারা হলেন চট্টগ্রাম কর আপিল অঞ্চলের অতিরিক্ত কর কমিশনার সাইফুল আলম, কর অঞ্চল-১৪, ঢাকার যুগ্ম কর কমিশনার এ কে এম শামসুজ্জামান ও কর অঞ্চল-২, চট্টগ্রাম এর সহকারী কর কমিশনার মো. আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওই ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রেরণ করা হলো।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের কর অঞ্চল-১ মোহাম্মদ সাইফুল আলম বা এস আলমের দুই পুত্র আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলমের রাজস্ব ফাঁকি ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ গভর্ণরকেও অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত ১৭ অক্টোবর ঘুষ নেওয়া ও দুর্নীতি করার অভিযোগে অতিরিক্ত কর কমিশনারসহ ওই তিন আয়কর কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিন কর্মকর্তাই চট্টগ্রামে কর্মরত থাকার সময় ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কর্মকর্তারা হলেন- চট্টগ্রাম কর আপিল অঞ্চলের অতিরিক্ত কর কমিশনার সাইফুল আলম। এর আগে তিনি কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রামের যুগ্ম কর কমিশনার ছিলেন।

কর অঞ্চল-১৪, ঢাকার যুগ্ম কর কমিশনার এ কে এম শামসুজ্জামান। এর আগে তিনি কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রামের যুগ্ম কর কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

কর অঞ্চল-২, চট্টগ্রাম এর সহকারী কর কমিশনার মো. আমিনুল ইসলাম। এর আগে তিনি কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার (ইএসিটি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর একই অভিযোগে কর কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম আকন্দকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি চট্টগ্রাম কর আপিলাত ট্রাইবুন্যাল, দ্বৈত বেঞ্চের সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর কমিশনারকে বরখাস্তের ২৮ দিন পর কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রামের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলো।

তিনটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯(১) ধারা মোতাবেক সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তারা বিধি মোতাবেক খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন। উল্লেখ্য, ধারা ৩৯(১) সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের প্রস্তাব বা বিভাগীয় কার্যধারা রুজু করা হলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অভিযোগের মাত্রা ও প্রকৃতি, অভিযুক্ত কর্মচারীকে তার দায়িত্ব হতে বিরত রাখার আবশ্যকতা, তদন্তে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা, ইত্যাদি বিবেচনা করে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে।

আরএম/পিএইচ