বৃহস্পতিবার থেকে কাপ্তানবাজারে সরকারি দামে বিক্রি হবে ডিম
ডিমের বাজারের চলমান অস্থিরতা দূর করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সরকারি দামে ডিম বিক্রির বিশেষ কার্যক্রম। প্রাথমিক অবস্থায় বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর কাপ্তানবাজারে এ কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া শুক্রবার তেজগাঁও বাজারেও এ কার্যক্রম শুরু হবে। এই দুই পাইকারি বাজারে প্রতিদিন ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এ কার্যক্রমের ফলে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। যার প্রভাব পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই পড়বে।
বিজ্ঞাপন
ডিম উৎপাদনকারী দেশের অপেক্ষাকৃত বড় খামারগুলো ডিম সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে এ কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল’ (বিপিআইসিসি)। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর’ এর মহাপরিচালক মো. আলীম আখতার খান, রাজধানীর কাপ্তানবাজারে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
এ বিষয়ে বিপিআইসিসির যুগ্ম আহ্বায়ক মসিউর রহমান বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোল্ট্রি স্টেকহোল্ডাররা একত্রে বসে ডিমের যৌক্তিক উৎপাদন খরচসহ উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছে।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিজনিত বন্যার কারণে দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ জেলার পোল্ট্রি খামারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে দৈনিক প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডিমের উৎপাদন কমে যায়। ফলে চাহিদা ও যোগানের মাঝে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়।
মসিউর বলেন, দেশের এ সংকটকালীন সময়ে একটি মহল অতিরিক্ত মুনাফা লাভের চেষ্টা করলে ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। দেশ ও মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে একাত্ম হয়ে পোল্ট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘বিপিআইসিসি’ আগামী ১৫ দিনের যে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তাতে খামার থেকে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১২ টাকায় পাওয়া যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সরকারের বাজার তদারকি সংস্থা, ডিম উৎপাদনকারী বড় খামারি ও পাইকারি আড়ৎদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ উদ্যোগকে সফল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ উদ্যোগের অপর সমন্বয়ক ‘ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (বিএবি) এর সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, খামার থেকে ভোক্তার হাতে ডিম পৌঁছাতে ৭ হাত বদল হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশ কিছু এলাকায় কিছু অপেশাদার লোকজনও ডিমের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এতে হাত বদলের সংখ্যা আরও বেড়েছে। যত হাত বদল হবে, দাম ততই বাড়বে। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে হাত বদলের সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহায়তায় আমরা সে চেষ্টাই করছি।
বিপিআইসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ১৫ অক্টোবর সকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এবং দুপুরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে পৃথক দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে দিন সন্ধ্যায় বিপিআইসিসির উদ্যোগে ডিম উৎপাদনকারী বড় খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি অনলাইন সভা আহ্বান করা হয়। পরদিন বড় খামারি এবং তেজগাঁও এবং কাপ্তানবাজারের পাইকারি আড়ৎদারদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে আরও একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকায় ডিমের সরবরাহ ও বিপণন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
পরবর্তীতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজধানীর কাপ্তানবাজারে সরকারি দামে ডিম বিক্রির কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সময় স্বল্পতার কারণে তেজগাঁও পাইকারি বাজারে যথাসময়ে ডিমের চালান পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই শুক্রবার থেকে তেজগাঁও বাজারের কার্যক্রম শুরু হবে।
এ কার্যক্রমে ডিম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কাজী ফার্মস, ডায়মন্ড এগস লি., প্যারাগন পোল্ট্রি, পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, নারিশ পোল্ট্রি, ভিআইপি শাহাদত পোল্ট্রি, নর্থ এগ লি., নাবিল এগ্রো, আর.আর.পি, রানা পোল্ট্রি, চাঁদ এগ্রো, কৃষিবিদ পোল্ট্রি, চিত্রা এগ্রো, আমান পোল্ট্রি, মেগা পোল্ট্রি। আশা করা হচ্ছে, আফিল এগ্রো এবং প্রাণ এগ্রোও পরবর্তীতে এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হবে।
এএসএস/এসকেডি