আমদানি-রপ্তানির কূটকৌশলে শুল্ককর ফাঁকি ও পাচার সংক্রান্ত প্রায় ৪১৭ কোটি টাকার অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগ। মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা ও চার্জশিট অনুমোদনের জন্য এনবিআরের কাছে অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও কাস্টমস গোয়েন্দা।

সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে একটি পর্যালোচনা সভায় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় কাস্টম হাউস ও কাস্টমস গোয়েন্দার ওই প্রতিবেদন নিয়ে বেশকিছু বিষয়ে কোয়ারিও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৮ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্র ও এনবিআরের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠান আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে প্রায় ৪১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা পাচার ও মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ করেছে। পর্যালোচনা শেষে ৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা বা চার্জশিট দাখিল করতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসের সভায়। তবে বাকি ৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অধিকতর যাচাই করে অনুসন্ধান প্রতিবেদন পুনরায় পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেশ কিছু বিষয় নতুন তথ্য সংযোজন এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দালিলিক প্রমাণসহ আইনের ব্যবস্থা গ্রহণের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সভায়।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে—রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এমটি অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস (পাচার প্রায় ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা); আমদানিকারক ফ্যাশন ক্রিয়েট অ্যাপারেলস লিমিটেড (পাচার প্রায় ৮৪ লাখ টাকা); রপ্তানিকারক ইলহাম (প্রায় ১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা); ইমু ট্রেডিং কোং (প্রায় ৬৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা); এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন (প্রায় ৩২৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা); আমদানিকারক সামিট ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল (প্রায় ৬৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা); নিউ ইউর চয়েস ফেব্রিক্স (প্রায় ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা); সায়েম ট্রেডিং (প্রায় ১৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা); সায়েম এন্টারপ্রাইজ (প্রায় ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা); হপ-ইক (বাংলাদেশ) লিমিটেড (প্রায় ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা); ফাতেমা ইন্টারন্যাশনাল (প্রায় ৫৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা); মোহাম্মদ ট্রেডিং (প্রায় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা); বাংলা ভিনা এন্টারপ্রাইজ (প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ টাকা)।

প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে -

ফ্যাশন ক্রিয়েট অ্যাপারেলস লিমিটেড

এ প্রতিষ্ঠানের বন্ডেড লাইসেন্সধারী হলেও প্রতিষ্ঠানটির লিয়েন ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র নেই। কিন্তু এফওসি (ফ্রি অব কস্ট ) সুবিধায় এলসি ছাড়াই ২০১৭ সালের ১০ জুলাই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে আমদানির বিপরীতে ৮৪ লাখ ৬ হাজার ১০০ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে পরিশোধ না করেই আমদানি মূল্য অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করেছে। ভুয়া প্রত্যয়নপত্র দেওয়া ও অবৈধভাবে অর্থপাচারে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহেদ সায়িদ, পরিচালক খালেদ সাঈদ, আজম সাঈদ, আবু জাফর সায়িদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাদের বিষয় মানি লন্ডারিংয় প্রতিরোধ আইন অনুসারে চার্জশিট দাখিল করতে কাস্টমস গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

এমটি অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস

জাল রপ্তানির কাগজপত্র তৈরি করা এবং তা দেখিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা নগদ সহায়তা আত্মসাৎ করেছে এমটি অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্ট। ব্যাংক ও অডিট ফার্মের যোগসাজশে এ অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। এমটি অ্যাগ্রো লিয়েন ব্যাংক অডিটের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেমিট্যান্স হাউজের মাধ্যমে পাঠানো অর্থকে রপ্তানি হিসাবে দেখিয়ে প্রণোদনা নেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য কাস্টমস গোয়েন্দাকে দায়িত্ব দেয়। 

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়, এমটি অ্যাগ্রো মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে দুটি প্রতিষ্ঠানে মসলা রপ্তানি করে। এতে হলুদ, মরিচ, আদা, ধনিয়ার গুঁড়া রপ্তানির কথা উল্লেখ করেছে। কিন্তু এগুলো আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। একটি প্রতিষ্ঠান গুঁড়া দুধ এবং অন্যটি বেকারি আইটেমের ব্যবসা করে। প্রকৃতপক্ষে এমটি অ্যাগ্রো রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসন না করে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে পণ্যমূল্য বিদেশে পাচার করছে।

কাস্টমস গোয়েন্দা তদন্তে দেখেছে, প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া রপ্তানির বিপরীতে ১৪ দশমিক ৩১ লাখ ডলার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকে জমা হয়েছে। মূলত অর্থপাচার ও প্রণোদনা আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। পর্যালোচনা সভায় বলা হয়, ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে নগদ সহায়তা নেওয়ার পূর্বে নিরীক্ষা সম্পাদনকারী দুটি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয় সভায়। একই সঙ্গে কোনো রপ্তানি না হওয়া সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রা কীভাবে প্রত্যবসিত হয়; তা নিশ্চিত হতে এবং মানিলন্ডারিং সংঘটনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সম্পৃক্ত অপরাধ সংগঠিত হয়েছে তা উল্লেখ করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইলহাম, ইমু ট্রেডিং কোম্পানি ও এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন

প্রতিবেদন বলছে, রপ্তানিকারক ইলহাম, ইমু ট্রেডিং কোম্পানি ও এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন—এই তিনটি প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লিম্যাক্স শিপিং লিমিটেডের সহায়তায় রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করেছে। কাস্টমস গোয়েন্দার অনুসন্ধানে জালিয়াতি ও অর্থপাচার প্রমাণিত হওয়ায় তিনটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইলহাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লিম্যাক্স শিপিং লিমিটেডের যোগসাজশে ৩৯টি বিল অব এক্সপোর্টের মাধ্যমে ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮৮ ডলার বিদেশে পাচার করেছে। একইভাবে ইমু ট্রেডিং কোম্পানি ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩৭১টি বিল অব এক্সপোর্টের মাধ্যমে ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ৯৩ ডলার সমমূল্যের রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করেছে। এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন ২০২২ সালে ১৩৮২টি বিল অব এক্সপোর্টের মাধ্যমে ৩ কোটি ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৬৩ ডলার সমমূল্যের রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করেছে বলে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। 

সামিট ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল

সামিট ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল মিথ্যা ঘোষণা ও ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আমদানি করেছে। যার অর্থ অবৈধ পন্থায় বিদেশে পাচার করেছে। প্রতিষ্ঠানটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সুপার সনিক ফ্রেইট সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের সহায়তায় ৬৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৯ টাকা পাচারের চেষ্টা করেছে। অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা অনুমোদনে এনবিআরকে প্রতিবেদন দেয় কাস্টমস গোয়েন্দা। পর্যালোচনা সভায় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্যের মূল্য কীভাবে পরিশোধ করা হয়েছে, সেই পণ্য ফেরত পাঠানোর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা—এই বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে সম্পূরক প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে সভায়।

নিউ ইউর চয়েস ফেব্রিক্স

প্রতিষ্ঠানটি মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পণ্য আমদানি করেছে। যাতে ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫২৮ টাকা বিদেশে পাচারের চেষ্টা করেছে। তবে পণ্যের মূল্য অন্য উপায়ে বিদেশে পাঠিয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের যোগসাজশে প্রতিষ্ঠান মানিলন্ডারিং অপরাধ করেছে। চট্টগ্রাম
কাস্টমস হাউসের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ায় নিউ ইউর চয়েস ফেব্রিক্সের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সায়েম ট্রেডিং ও সায়েম এন্টারপ্রাইজ

সায়েম ট্রেডিং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহায়তায় মিথ্যা ঘোষণা ও ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আমদানি করেছে। এতে ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩৪ টাকা পাচারের চেষ্টা করেছে। কাস্টমস গোয়েন্দার অনুসন্ধানে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তবে পর্যালোচনা সভায় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে—পণ্য চালানের ঘোষিত ওজনের তুলনায় কায়িক পরীক্ষায় প্রাপ্ত ওজন প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। মানিলন্ডারিং সংঘটনের ক্ষেত্রে আমদানিকারকের সঙ্গে শিপিং এজেন্টের পারস্পরিক যোগসাজশ রয়েছে কিনা—সে বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান করে সম্পৃক্ততা বা যোগসাজশের বিষয়টি যাচাই করে মানিলন্ডারিং মামলা দায়েরের সুপারিশ সম্বলিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেওয়ার নিদের্শ দেওয়া হয়। 

অপরদিকে, আমদানিকারক সায়েম এন্টারপ্রাইজ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খান এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে যোগসাজশে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আমদানির মাধ্যমে ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯১৭ টাকা পাচারের চেষ্টা করেছে। কাস্টমসের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ায় আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের অনুমোদন করা হয়। তবে প্রতিবেদনে শুল্ককর পরিশোধের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। এই দুটি বিষয়ের অনুসন্ধান কাজের দায়িত্বে আছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। 

ডিইপিজেডের প্রতিষ্ঠান হপ-ইক (বাংলাদেশ) লিমিটেড

চীন থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের উপকরণ (গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ) ঘোষণায় বন্ড সুবিধায় আনা সিগারেটের একটি চালান আটক করে কাস্টমস গোয়েন্দা। সাভারের ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) প্রতিষ্ঠান হপ-ইক (বাংলাদেশ) লিমিটেড। পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানটি হংকং এর হপ-লান (হংকং) লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেট আমদানিতে সহযোগিতা করে শিপিং এজেন্ট টোটাল টান্সপোর্টেশান লিমিটেড ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চান্দু করপোরেশন। এতে সিগারেটের মূল্য হিসেবে প্রায় ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পাচার করেছে প্রতিষ্ঠান।

কাস্টমস গোয়েন্দার অনুসন্ধানে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, শিপিং এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ পাওয়ায় কাস্টমস গোয়েন্দা তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা অনুমোদনের সুপারিশ করেছে। তবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসও একই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদনের জন্য এনবিআরে পাঠিয়েছে। পর্যালোচনা সভায় বলা হয়েছে—এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাস্টমস গোয়েন্দার অনুসন্ধান প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং আইনে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেজন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের আর মামলা করার প্রয়োজন নেই।

ফাতেমা ইন্টারন্যাশনাল 

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওএসএল ট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের যোগসাজশে পণ্য আমদানির আড়ালে ঘোষণা বহির্ভূতভাবে ৭৩ হাজার ৯২৭ ডলার বা ৫৯ লাখ ১৪ হাজার ২১৬ টাকা পাচারের চেষ্টা করেছে। কাস্টমস গোয়েন্দার অনুসন্ধানে যার প্রমাণ পেয়েছে। তবে পর্যালোচনা সভায় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে—আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সঙ্গে শিপিং এজেন্টের যোগসাজশ রয়েছে কিনা—তা অধিকতর অনুসন্ধান করে মানিলন্ডারিং মামলা দায়েরের সুপারিশ সম্বলিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, রপ্তানিকারক প্রিয়াঙ্কা ফ্যাশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা আরো অনুসন্ধান করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এনবিআরে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মোহাম্মদ ট্রেডিং ও বাংলা ভিনা এন্টারপ্রাইজ

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটি মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির আড়ালে শুল্ককর ফাঁকির পাশাপাশি ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৭ টাকা বিদেশি পাচার করেছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়ায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা অনুমোদনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। পর্যালোচনা সভায় আমদানিকারকের সঙ্গে শিপিং এজেন্ট জড়িত রয়েছে কিনা—তা যাচাই করে পুনরায় অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলা ভিনা এন্টারপ্রাইজ মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির আড়ালে শুল্ককর ফাঁকির পাশাপাশি ১ কোটি ২৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪২ টাকা বিদেশে পাচার করেছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনুসন্ধানে তা প্রমাণিত হওয়ায় পর্যালোচনা সভায় প্রতিষ্ঠান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় রিচ অ্যান্ড রিল্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মানিলন্ডারিংয়ের তদন্ত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আরএম/এসএম