ডিম মাংসের পর নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে পাঙাসও
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরছে না কোনো কিছুতেই। পাল্লা দিয়ে দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর। ডিম, মাংসের পর এবার বেড়েছে ‘গরিবের মাংস’ খ্যাত পাঙাসের দাম। সেই সঙ্গে অন্যান্য মাছের দামও বাড়তি।
হঠাৎ করে সব কিছুর দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছেন না বিক্রেতারা। এদিকে দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতির বাজারে কোনোরকম খেয়ে-পড়ে ঘর সংসার চালানো পরিবারগুলোতে বাড়ছে অস্বস্তি, কমছে সুখ-শান্তি।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়, যা সাধারণত ১৭০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও আজকের বাজারে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত, যা সাধারণত ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই কিনতে পারা যায়। শুধু পাঙাস আর রুই মাছই নয়, দাম বেড়েছে তেলাপিয়া, পাবদা, চিংড়ি, ইলিশসহ প্রায় সব ধরনের মাছেরই।
সাধারণত মাছের বাজার ঘুরে পাঙাস-তেলাপিয়া মাছেই স্বস্তি মিলতো মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের। তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত, যা সাধারণত ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে থাকে। এ ছাড়াও বাজারে চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০, কার্প জাতীয় মাছ ৩৫০-৩৮০, চাষের শিং ৪০০, সাগরের পোয়া ৪০০-৬৫০ ও বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছিল ৬৫০-৭০০ টাকায়।
এ ছাড়াও আজকের বাজারে পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকায়।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় মাছ-মাংসের দাম তুলনামূলক বেশি চাওয়াতে বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে তর্কে জড়াচ্ছেন ক্রেতারা। রাজধানীর বাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকার মাছের বাজারে বাজার করতে আসা শামসুল ইসলাম নামক এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, একের পর এক জিনিসের দাম বাড়ছে। প্রথমে বাড়লো ডিমের দাম, এরপর মুরগির দাম আর এখন বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। তাহলে আমরা কী খেয়ে বাঁচবো? বাসায় তো খালি হাতে ফেরা যায় না। এদিকে আমাদের আয়-রোজগারও বাড়ে না। এভাবে কি দিনের পর দিন চলতে পারে?
তিনি বলেন, আমরা যারা গরীব মানুষ, আমরা চাইলেই গরুর মাংস খেতে পারি না। মুরগির মাংসের দামটাও কিছুদিন যাবত বেশি। এ অবস্থায় মাছটাই ছিল আমাদের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু এখন যে হারে দাম বাড়ছে, মাছ খাওয়াও ছেড়ে দিয়ে শুধু ভর্তা-ভাতই খেতে হবে।
বাজার করতে আসা মাহমুদুল হাসান নামক এক ক্রেতা বলেন, দিনের পর দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে মাসের খাবার খরচ বেড়েছে। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। ছোট একটা চাকরি করে আগে যা বেতন পেতাম, এখনও তাই পাই। কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাওয়ার উপায় নেই।
সাব্বির আহমেদ নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা মেসে থেকে পড়াশোনা করি, আমাদেরকে অনেকটাই মাছের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। কিন্তু দামটা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদেরকে অনেকটাই বিপাকে পড়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের কথা চিন্তা করে কে? আমরাই বা আমাদের কষ্টগুলো কাকে বলব? দিনের পর দিন চাকরির পড়াশোনা করে যাচ্ছি, বাবা মায়ের হাত থেকে টাকা আনতে আনতে এখন আর চাইতে ইচ্ছে করে না। এখন তাহলে আমাদের উপায় কি?
আরও পড়ুন
এদিকে বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধির কারণ নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও কেউ কেউ বলছেন, সম্প্রতি বন্যার কারণে অসংখ্য মাছ চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এমনকি এই কারণে বাজারে মাছের চাহিদাও বেশি। ফলে দামও কিছুটা উর্ধ্বমুখী। রফিকুল ইসলাম নামে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে মাছের বড় একটা অংশই আসে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর এলাকা থেকে। কিন্তু কয়েকদিন আগেই সেসব এলাকায় বন্যার কারণে বেশকিছু চাষিদের মাছ ভেসে গেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম কিছুটা বাড়তি।
তবে খাইরুল ইসলাম নামক আরেক বিক্রেতা বলেন, ইলিশের মৌসুম থাকায় জেলেরা এখন সাগর-নদীতে অন্যান্য মাছ ধরতে চায় না। ইলিশের ভালো দাম থাকায় সবাই এখন ইলিশের পিছনে ছোটে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই ইলিশ ধরা বন্ধ হলে মাছের বাজারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
টিআই/এনএফ