সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী অন্তবর্তীকালীন সরকার দ্রুত একটি নির্বাচনী রূপরেখা দেবে— এমনটাই আশা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তপন চৌধুরী।

তিনি জানান, দেশ চালাবেন মূলত রাজনৈতিক দলগুলো, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিগত দিনে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা কাম্য ছিল না। এজন্য অন্তবর্তীকালীন সরকার এসেছে। তারা অল্প সময়ের জন্য থাকবেন। তাই তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা দ্রুত একটা নির্বাচনী রূপরেখা দেবেন। যেন দেশবাসী জানতে পারে কবে কখন নির্বাচন হবে।   

বুধবার (৯ অক্টোবর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে বাংলাদেশের শিল্পখাতের ভবিষ্যৎ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান তিনি।

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ্ মৃধার সভাপতিত্বে "তপন চৌধুরী কনভারসেশন উইথ ইআরএফ মেম্বারস" শিরোনামে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি স্বস্তিতে আছেন বলে মন্তব্য করে স্কয়ার গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তপন চৌধুরী বলেন, আমরা আসলেই খুব কমফোর্ট ফিল করছি। একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সরকারের অফিসগুলোতেও আমরা বড় ধরনের একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। আগে যেখানে কথাই বলা যেত না, প্রশ্নই করা যেত না। এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানও খুবই পজিটিভ। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছেন। একই অবস্থা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও। আমরা আশাবাদী।

তৈ‌রি পোশাক খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে জানিয়ে তপন চৌধুরী বলেন, দেশে তৈ‌রি পোশাক খাতে এখন অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। যা বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। এই অবস্থার কারণে অনেক বিদেশি ক্রেতা চ‌লে যা‌চ্ছেন।

তিনি জানান, পোশাক খাত অস্থিতিশীল করার পেছনে অনেক ক্ষেত্রে দেশের বাইরের ইন্ধন থাকে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই দেশে কিছু হলেই রাজনৈতিকভাবে পোশাক খাতকে ব‌্যবহার করা হয়। এর ফলে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দেশের স্বার্থে এ অবস্থা থেকে বের হতে হবে। কারণ, এখানে প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিক সরাসরি কাজ করছে। যাদের বেশিরভাগ নারী। বাংলাদেশে গার্মেন্টস সেক্টরের সফলতার পেছনেও নারী শ্রমিকদের ব্যাপক অবদান।

এক প্রশ্নের জবাবে তপন চৌধুরী বলেন, দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে এখন বেশ কিছু ক্রেতা শ্রীলঙ্কায় চলে যাচ্ছেন। যারা আগে শ্রীলঙ্কাই ছিল। তাদের (শ্রীলঙ্কা) অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে আমাদের দেশে ওইসব ক্রেতারা এসেছিল। এখন আমাদের অবস্থা অস্থিতিশীল হওয়ায় তারা আবারও ওখানে চলে যাচ্ছেন। তবে ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগিরই স্থিতিশীল হবে সবকিছু।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি থাকার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, ব্যবসায়ী থাকলে কেউ বলবে টেক্সটাইলে একটু সুবিধা দরকার, ওষুধ শিল্পে একটু সুবিধা দরকার। এখন যারা আছেন তারা কেউই ব্যবসায়ী নন, তাতে করে একটা সুবিধা হচ্ছে সব সেক্টরকেই তারা সমানভাবে দেখছেন। এটা পজিটিভ।

এই পরিস্থিতির মধ্যেও বর্তমান সরকারের কাছে দ্রুত একটি নির্বাচনী রূপরেখার দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।

তপন চৌধুরী বলেন, যারা এখন ক্ষমতায় আছেন তারা খুব অল্প সময়ের জন্য। তারা একটা পরিবর্তন রেখে যেতে চান। তবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের হবে যদি এই সময়ের মধ্যে ভালো কিছু না দেখি। একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এই সুযোগটা আর পাবেন না। এই সময়ে দেশের জন্য একটা ভালো কিছু করে নেন।’

এস আলম, বেক্সিমকোসহ যারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ব্যবসা করেছেন তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা খারাপ তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে, এখানে তো মুখ দেখে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়েই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার সবার সঙ্গে বসে সবার কথা শুনছেন। জাতিসংঘে যখন গেলেন, তখন আমাদেরকে জানালেন, কাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার তোমরা আমাকে বলো। অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার একদম ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। সেই জায়গা থেকে তিনি আমাদের বললেন, তাদের সঙ্গে তোমাদের বসিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি, তোমরা তোমাদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলো।

তরুণ ও নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমাজে একটা টেন্ডেন্সি তৈরি হয়েছে। আমরা ওভারনাইট বড় হওয়ার চিন্তায় থাকি। এটা থেকে বের হতে হবে। নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আমাদের সমসাময়িক অনেক বড় ব্যবসায়ী ছিল, যারা সময়ের পরিবর্তনে এখন আর তাদের ব্যবসায়িক অবস্থান হারিয়েছেন। এর মূল কারণ নীতি-নৈতিকতা মেনে তারা ব্যবসা পরিচালনা করেননি।  

সাবেক সরকার প্রধানকে ইঙ্গিত করে তপন চৌধুরী বলেন, আমরা কি আমাদের ঘরে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে ব‌লি এটা আমার, ওটা আমার, আমার টাকায় সংসার চলে আমি সবাইকে খাওয়ায়, আমার কথায় সব চলবে! এর চেয়ে নোংরা কথা কী আর হতে পারে? সংসার যেমন আপনার একার নয়, তেমনি দেশটাও কারো একার নয়। এমন সব মনোভাব থেকে বের হতে হবে। আশা ক‌রি প‌রিব‌র্তন হবে। কারণ, এটা প‌রিবর্তনের যুগ। 

তিনি বলেন, আমার দাদা, আমার বাবা দল করেছে, আমি জায়গা পাব, চাকরি পাব, রাজনীতি করব অন্যরা পারবে না, করতে পারবে না— এটা কেমন কথা। এখান থেকে বের হতে হবে। যে যেখানে যোগ্য সে সেখানে জায়গা পাবেন এটা নিশ্চিত করতে হবে।

এসআই/এমজে