খুচরা, পাইকারি ও উৎপাদন পর্যায়ে ডিম-মুরগির দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও বাজারের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। নির্ধারণ করে দেওয়া দামে মিলছে না এর কোনোটিই। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।

বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে তথা খুচরা বাজারে প্রতি পিস ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সায়, ডিমপ্রতি ১ টাকা ৮৮ পয়সা বেশি। বাজারে প্রতি হালি (৪টি) বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, আর ডজন হিসেবে (১২টি) ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। কোনো কোনো দোকানে এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার কয়েকটি দোকানে প্রতি হালি বাদামি ডিম ৬০ টাকায় বিক্রি হতেও দেখা যাচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১৫ টাকা।

অন্যদিকে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। যা নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশি।

একইভাবে সোনালি মুরগির প্রতি কেজির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে কেজিতে বেশি ১০ টাকা।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ডিম ও মুরগির দামের এমন চিত্র দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা। তারা বাজার মনিটরিংয়ের কার্যক্রম না থাকাকে এর জন্য দায়ী করেছেন।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী খাদেমুল ইসলাম বলেন, ডিম-মুরগির দাম সরকার যেটা নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটাও আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য বেশি। তবুও খুশি হয়েছিলাম যে দাম তো নির্ধারণ করে দিলো, এর চেয়ে বেশি দাম কোনো দোকানি নিতে পারবে না। কিন্তু দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার ১০ দিন পরেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার।   

একই বাজারে আরেক ক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া ডিম-মুরগির দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে। ডিম কিনলাম ৫৫ টাকা হালি, অথচ সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে ৪৭ টাকা ৪৮ পয়সা হালি। আবার ব্রয়লার, সোনালি মুরগি কিনলাম সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে প্রতি কেজি ১০ টাকারও বেশি দামে। তাহলে দাম নির্ধারণ করে কি লাভ হলো? বাজার মনিটরিং নেই, আবার যেসব অসাধু সিন্ডিকেট আছে সেসব নিয়ন্ত্রণেও সরকারের কোনো উদ্যোগ বাজারে দেখছি না। এসব কারণে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের পকেট কেটে যেমন ইচ্ছে তেমন দাম আদায় করে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

ডিমের দামের বিষয়ে রাজধানীর মহাখালী বাজারের বিক্রেতা খোরশেদ আলম বলেন, আমরা বাজার থেকে পাইকারি কেনার সময়ও সরকার নির্ধারণ করে দেওয়া দামে কিনতে পারছি না। আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এছাড়া বাজারে চাহিদার তুলনায় ডিমের সরবরাহ কম তাই দাম বাড়তি। গেল বন্যায় বিভিন্ন অঞ্চল মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাজারে ডিম, মুরগির সরবরাহ কমেছে।

একই কারণ দেখিয়ে রাজধানীর বাড্ডার একটি বাজারের মুরগি বিক্রেতা সাজেদুর রহমান বলেন, খুচরা বাজারে ব্রয়লার বিক্রি করছি ১৯০ টাকা প্রতি কেজি, আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আসলে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমরা সেই দামে কিনতেও পারছি নাঅ ফলে খুচরা বাজারে কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা পাইকারি বাজারে যখন সঠিক দামে কিনতে পারব তখন খুচরা বাজারে কম দামে বিক্রি করতে পারব।

এর আগে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এএসএস/জেডএস