বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের পোশাক খাত ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে আরও বেশি নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শনিবার (৮ মে) ‘করোনায় গার্মেন্টস খাতের কর্পোরেট জবাবদিহিতা ও শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সংলাপে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সংলাপটি পরিচালনা করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৪০ লাখ শ্রমিকসহ এক কোটির মতো মানুষ তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। এ খাত থেকে বাংলাদেশের প্রায় ৮৪ ভাগ রফতানি আসে। আমরা অনেকখানি নির্ভরশীল এ পোশাক শিল্পের ওপর। রানা প্লাজা ঘটনার পরে সবাই অনেক আতঙ্কিত ছিল। বর্তমানে আমরা ঘুরি দাঁড়িয়েছি। সত্যি বলতে, পোশাক শিল্প আরও মজবুত অবস্থায় রয়েছে। দেশে শিশুশ্রম নির্মূল হয়েছে। ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা হয়েছে। ধীর ধীরে অনেক এগিয়েছে। শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করবে। সরকার শ্রমিকদের পাশে আছে। 

তিনি বলেন, একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারির পর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের পোশাক খাতকে প্রাপ্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সে জায়গাটা আরও ফোকাস হওয়া দরকার। এ বিষয়ে সবার নজর দেওয়া উচিত। সবার ভোকাল থাকা উচিত। আমাদের আরও বেশি আলোচনা করা দরকার।

উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, গত বছর পোশাক শিল্পের যে পণ্য ১৫ ডলারের পাওয়া যেত, সেটার বর্তমানে ১২ ডলারে পাওয়া যাচ্ছে। এই অবস্থায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এটা হয়ত মালিকপক্ষের কথা হয়ে যায়। তারপরও বলব পোশাক শিল্পের স্বার্থে আমাদের এ বিষয়টি সামনে আনা উচিত।

ঢাকা ও গাজীপুরের ১০২টি গার্মেন্টস, ৩০১ একজন সক্রিয় শ্রমিক ও ১০০ জন বেকার শ্রমিকদের তথ্য নিয়ে সিপিডি গবেষণাপত্র তৈরি করে। এর মধ্যে ৭৬.৫ শতাংশ ছোট কারখানা ও ২৩.৫ শতাংশ বড় গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে।

সিপিডির গবেষণায় দেখা যায়, রফতানির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরও শুধুমাত্র বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর তালিকাভুক্ত না হওয়ার কারণে অনেক কারখানা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধা পায়নি।

সিপিডির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য ৬৭.৬০ শতাংশ কারখানা আবেদন করে। যার মধ্যে ৬২.৭০ শতাংশ সহায়তা পেয়েছে। ১৭.৬০ শতাংশ কারখানার যোগ্যতাই ছিল না আবেদন করার। আর ১২.৭০ শতাংশ কারখানা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আবেদন করেনি। মূলত বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর তালিকাভুক্তরা সরকারের ওই প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা নিতে পেরেছে। এজন্য সিপিডির সুপারিশ হলো, রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কারখানা যাতে প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করা।

সিপিডি বলছে, করোনাকালীন শ্রমিকদের কাজের চাপ অনেক বেড়েছে। ৩০ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, তাদের কাজের চাপ বেড়েছে। ২২ শতাংশ শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, তারা হয়রানির শিকার। তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা অনেকেই ভীত থাকেন, যদিও অধিকার নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে দাবি করলে কালো তালিকাভুক্ত হতে পারেন। অনেক শ্রমিকদের মজুরি বাড়লেও পরিবারের আয় তুলনামূলকভাবে কমেছে। ফলে তারা খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন করে তা সমন্বয় করছেন।

সংলাপে যুক্ত ছিলেন বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট মো. ফারুক হাসান, বিকেএমইএর প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যরিস্টার সারা হোসেন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি মিন্টু ঘোষ প্রমুখ।

আরএম/ওএফ