বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যদিও এরইমধ্যে তার পদত্যাগ করার গুঞ্জন চলছে।

অন্যদিকে গতকাল এনবিআর চেয়ারম্যান অফিস এলেও আজ তিনি অফিসে আসেননি। তবে এখনো বিশ্বাসযোগ্য কোনও সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারিনি।

বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকেই বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। দুপুরের দিকে যা এনবিআরের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন কর অফিসে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের এক দাবি স্বৈরাচার চেয়ারম্যানের পদত্যাগ।

এনবিআরের কর্মচারীরা বলছেন, এটাই সুবর্ণ সুযোগ। এটি হাত ছাড়া করলে ভবিষ্যতে অনেক মূল্য দিতে হবে। আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সকল কর্মচারী/কর্মকর্তাগণ দীর্ঘ দিন থেকে আমাদের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কেন বাইরের ক্যাডার নিয়ে এসে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে? আমাদের শুল্ক, আবগারী ক্যাডার থেকে ২ বছরের জন্য ও ইনকাম ট্যাক্স ক্যাডার থেকে ২ বছরের জন্য মেম্বারদের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলে কি সমস্যা? আমাদের কষ্ট তারা বুঝতে পারবেন।

তারা বলছেন, বাইরের ক্যাডারের কর্মকর্তারা আমাদের কষ্ট বুঝতে চান না। তাদের ইচ্ছে মত করে আমাদের চালাতে চান, সেটা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখার এটাই উপযুক্ত সময়। আমাদের প্রমোশন হওয়ার কথা ছিল সিরিয়াল মোতাবেক, অতীতেও হয়েছে। চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন লোকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ইচ্ছে মত যাকে তাকে সামান্য অজুহাতে সিরিয়াল ভঙ্গ করে নিজের পছন্দ মতো করে প্রমোশন ও বদলি হয়েছে। সময়মতো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি, ডিপিসি করা হচ্ছে না, পদোন্নতির পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না, নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। আমরা যারা এই বৈষম্যের শিকার হয়েছি, তারাই প্রতিবাদ জানাই।

কর্মচারীরা বলছেন, আমরা ছাত্রদের মতো সোচ্চার না হলে ভবিষ্যতে আরও মূল্য দিতে হবে। এখনই সময় সবাই একত্র হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে এর প্রতিবাদ করি। স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনে কলম বিরতি পালন করুন। বিভিন্ন কর্মসূচি ঠিক করার জন্য বিসিএস কাস্টমস এ্যাসোসিয়েশনসহ অন্যান্য এ্যাসোসিয়েশনকে ভূমিকা পালন করার জন্যও অনুরোধ করছি।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১। প্রশাসন ক্যাডার থেকে কোনো কর্মকর্তা প্রেষণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পদায়ন করা যাবে না।

২। স্বৈরাচারী শাসকের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে অবিলম্বে পদ থেকে বরখাস্ত করে আয়কর/কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে।

৩। অবিলম্বে স্বৈরাচারী চেয়ারম্যানের দোসর এবং প্রিয়পাত্র প্রথম সচিব (কর প্রশাসন) মো. শাহিদুজ্জামানকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করে কর ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন করতে হবে।

৪। দুই বছর পর পর বদলি বাণিজ্য বন্ধ করে আয়কর আইন-২০২৩ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং আয়কর আদায়ের স্বার্থে অতীতের মতো রাজস্ব বান্ধব এবং প্রযোজ্যতা সাপেক্ষে বদলি করতে হবে।

৫। অবৈধ নিয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

৬। সব কর্মচারীদের পদায়ন কর্মচারীদের জন্য প্রণীত জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা ও আইন অনুযায়ী করতে হবে।

৭। আয়কর অনুবিভাগের ১০তম-২০তম গ্রেডের সব শূন্য পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং সব পদ পদোন্নতিযোগ্য হতে হবে, কোনো পদ ব্লক রাখা যাবে না।

৮। কর্মচারীদের নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মচারীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় কোনো সিদ্ধান্ত মানা হবে না।

৯। সর্বশেষে আয়কর অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত শুধু আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা নেবে।

আরএম/এমএসএ