দাম কমছে চালের/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

দীর্ঘদিন ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া চালের দাম কমতে শুরু করেছে। নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করায় মোটা ও মাঝারি মানের নতুন চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা কমছে। তবে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পুরাতন নাজির ও মিনিকেটসহ ভালো মানের চাল।

চালের মিলের মালিকরা বলছেন, এখনও পুরোদমে ধান টাকা শুরু হয়নি। ফলে বেশি দামেই কেনা ধানের চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তাই দাম এখনও কিছুটা বেশি।

পুরাতন চাল বেশি দামেই কিনতে হয় বিধায় আগের দামেই বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দেশে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। নতুন ধানের চালও বাজারে আসতে শুরু করেছে। এ কারণে নতুন চালের দাম কমছে। আরও কমতে পারে বলে জানান তারা।

তবে পুরাতন চালের দাম না কমায় ক্রেতারা ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, ধানের দামের তুলনায় এখনও চালের দাম অনেক বেশি। বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চালের দাম যৌক্তিক মূল্যে আনা উচিৎ।

শুক্রবার (৭ মে) রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায় দেখা গেছে, পুরাতন ভালো মানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৪-৬৫ টাকায়। তবে নতুন মিনিকেট ও নাজির বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকায়। অর্থাৎ, পুরাতন চালের দামের তুলনায় নতুন চাল কেজি প্রতি পাঁচ টাকা কম। মধ্যমানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজিতে আর হাসকি নাজির বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি দরে। 

দীর্ঘদিন ধরে ৫৪-৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া লতা বা ২৮ নম্বর চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজিতে। কেজিপ্রতি ২ টাকা কমে ৫০ টাকার মোটা স্বর্ণা চাল ৪৭ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫২ থেকে ৫৪ টাকা বিক্রি হওয়া পাইজম চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৯-৫০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ, এই জাতের চালও কেজিপ্রতি দুই টাকা কমেছে।

এছাড়াও বাজারগুলোতে ভালোমানের কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকা, মধ্যমানের কাটারিভোগের চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। সিদ্ধ কাটারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজিতে। টেপু শাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজিতে।  চিনি গুড়া পোলাও চাল ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর চিনিগুড়া ক্ষুদ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা কেজিতে।

পশ্চিম রামপুরা কাঁচাবাজারে চালের দোকানদাররা জানান, নতুন চাল কেজিপ্রতি ২ থেকে ৫ টাকা কমেছে। এখন তো ধানের সিজন, আস্তে আস্তে চালের দাম আরও কমবে।

গত মৌসুমের চেয়ে এবার চালের দাম বেশি না কম- এ প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার চালের দাম অনেক বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি দামে কিনতে হয় তাই বেশি দামেই বিক্রি করে।

এদিকে বাজারে চাল কিনতে আসা ক্রেতারা বলেন, কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছে না। আর আমরা কম দামে চাল কিনতে পারছি না। কষ্ট করছে কৃষক আর কারসাজি করে লোপাট করে নিচ্ছে আড়ৎদার, মিলার আর ব্যবসায়ীরা। আমরা ৩০ টাকার চাল ৬০ টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছি। আমাদের দেখার কেউ নেই।

বাড্ডা পাঁচতলা বাজারে চাল ব্যবসায়ী মজিব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। এ কারণে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, স্বর্ণা,পাইজাম এবং ২৮ নম্বর চাল কেজিপ্রতি কমেছে ২ টাকা। আর তিন জাতের নতুন চাল কেজিপ্রতি কমেছে ৩-৪ টাকা।

রামপুরা রওশন ট্রেডার্সের মালিক মুন্না হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরাতন মিনিকেট এক বস্তা চাল আমরা বিক্রি করি ৩ হাজার থেকে ৩১শ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি করে ৩ হাজার ২০০ টাকা। নতুন মিনিকেট চাল পাইকারি বিক্রি করি ২৮শ টাকা বস্তা।

মধ্যবাড্ডার মা-বাবা মেসার্স এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার জুনায়েদ আহমেদ শামিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিলগুলো নতুন ধান থেকে চাল তৈরি শুরু করেছে। কয়েকদিন ধরে সেই চাল বাজারে আসছে। ফলে নতুন চালের দাম কমেছে। তবে পুরাতন চালের দাম কমেনি।

তিনি বলেন, সেই চালগুলো বেশি দামে কেনা তাই বেশি দামেই বিক্রি করছি। 

ক্রেতা মনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভরা মৌসুম, এখনও চাল কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। এটা কোনো দেশ হলো? যখন ইচ্ছা ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়ায়। সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

মালিবাগ কাঁচাবাজারে বরিশাল জেনারেল স্টোরের মালিক সুজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন চালের দাম কমছে। কিন্তু পুরাতন চালের দাম কমছে না। কমতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে।

বাংলাদেশ রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা নজরুল ইসলাম বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের চাহিদার তুলনায় চাল কম ছিল বলেই দাম বেড়েছে। এখনও পুরাতন চাল সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে, আমাদের করার কিছু নেই। নতুন চাল আসতে শুরু করেছে। এমনিতেই চালের দাম কমে যাবে।

এমআই/এইচকে/জেএস