করোনায় কাজ হারিয়েছেন ৬২ শতাংশ মানুষ, কমেছে আয়ও
মহামারি করোনা সংক্রামণের নেতিবাচক প্রভাবে গত এক বছরে ৬২ শতাংশ মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছেন। অনেকে পুনরায় কাজ শুরু করতে সক্ষম হলেও কমেছে আয়। ফলে বাধ্য হয়ে তারা ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর।
বুধবার (৫ মে) ‘কোভিডকালে আয় ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি : কীভাবে মানুষগুলো টিকে আছে’ এমন শিরোনামের খানা জরিপে উঠে এসেছে সব তথ্য-উপাত্ত। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফাম বাংলাদেশ যৌথভাবে জরিপ কাজটি পরিচালনা করে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের ১৬টি জেলা এবং শহর ও গ্রাম মিলিয়ে বাছাইকরা ২৬০০ পরিবারের তথ্য নিয়ে জরিপকাজ পরিচালিত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ওই জরিপ কাজ শেষ হয়।
সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম খান জরিপের ফলাফলের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। জরিপের ফলাফলে যা পাওয়া গেছে-
৬২ শতাংশ কাজ হারিয়েছেন
সিপিডির তৌফিক ইসলাম বলছেন, জরিপে দেখা গেছে ৬২ শতাংশ মানুষ করোনা শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে কর্মসংস্থান হারিয়েছে। যার বড় অংশ ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে কর্মহীন হয়েছেন। পরে অনেকেই কাজে ফিরলেও আগের মতো চাকরি আর ফিরে পাননি। কর্মহীনদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ এক মাসের বেশি বেকার ছিলেন। তবে ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে জরিপকালীন দেখা গেছে, প্রায় সবাই চাকরি ফেরত পেয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায়।
কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে
জরিপে দেখা গেছে, কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে। এ খাতে ১৮.২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে সেবা খাতে ১.৫৪ শতাংশ কর্মসংস্থান কমেছে। আবার শিল্পখাতেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৮৬ শতাংশ। তার মানে হচ্ছে কর্মসংস্থান সেবা খাত থেকে কমে কৃষি খাতে স্থানান্তরিত হয়েছে। যারা কাজ যোগ দিয়েছেন তার ৯০ শতাংশই ছিল স্বপ্রণোদিত। অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করছেন। কেউ কেউ স্ব-উদ্যোগে কৃষিকাজ বেছে নিয়েছেন কিংবা কৃষিকাজে পরিবারকে সহায়তা করছেন। আবার কিছু মানুষ ডে-লেবার হিসেবে কাজ করছেন। তবে তাদের কাজের কর্মঘণ্টা কমেছে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, অধিক পরিমাণ কৃষি শ্রমিক হওয়ার কারণে তারা চাইলেও বেশি সময় কাজ করতে পারছে না। অর্থাৎ কৃষি সেক্টরে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যার আধিক্য দেখা গেছে জরিপে।
কর্মসংস্থান হলেও কমেছে আয়
কর্মসংস্থান হলেও আয় কমেছে উল্লেখ করে সিপিডি বলছে, কর্মসংস্থান হলেও আয় কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আয় কমেছে কৃষি খাতে। এই খাতে ১৬.৫০ শতাংশ আয় কমেছে, এরপরই আছে উৎপাদন খাতে কমেছে ১২.৭৫ শতাংশ। পরিবহন ও নির্মাণসহ সব খাত মিলিয়ে ১১.৯২ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। কারণ তাদের মজুরি ও কর্মঘণ্টা দুটোই কমেছে। যে কারণে আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ৬০ বছরের বশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর। তাদের আয় কমেছে ১৫.৩১ শতাংশ। এছাড়া ১৫ থেকে ২৯ বছরের ব্যক্তিদের আয় কমেছে ১০.২০, ৩০ থেকে ৬৪ বছরের মানুষের আয় কমেছে ১২.০২ শতাংশ।
করোনায় পরিবারের ব্যয় কমিয়েছেন
করোনার প্রভাবে ৭৮ শতাংশ মানুষ তাদের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন, ৫২ শতাংশ খরচ কমাতে গিয়ে খাদ্য অভ্যাস কিছুটা পরিবর্তন করেছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের ঋণের বোঝা বেড়েছে। ঋণ আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।
ভালো নেই কর্মে থাকা মানুষগুলোও
জরিপ বলছে, কর্মসংস্থানে আছেন এমন ৪০ শতাংশ মানুষ করোনা সংক্রামণের আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আর ৮৬ শতাংশ বলছেন তারা যা আয় করছেন তাতে সন্তুষ্টির জায়গায় নেই। জরিপের আর উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে ছাত্ররা এখন কাজে যোগ দিচ্ছেন। যেহেতু সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, সেই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন তারা।
সবচেয়ে বেশি বিপদে নিম্ন আয়ের মানুষ
করোনায় আয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের। ২৫০০ টাকা থেকে ৭৫০০ টাকা আয়ের মানুষের আয় কমেছে ২২ থেকে ২৮ শতাংশ। এর ফলে দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সিপিডি মনে করে। ক্যাটাগরিগুলো হলো- দারিদ্র্যতা, সমতা, পুষ্টিহীনতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের সামর্থ্য।
আরএম/এসএম