আগের তুলনায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের দাম ছিল কম। কিন্তু এর প্রভাব তেমন পড়েনি আমদানিতে। কারণ বিদায়ী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বেশিরভাগ সময় জুড়ে ছিল ডলার সংকট। চাহিদামতো ডলার না পাওয়ায় পণ্য আমদানি তেমন হয়নি।

গেল অর্থবছরে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা পরিমাণ সামান্য বেড়েছে অর্থাৎ তার আগের তুলনায় মাত্র ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি এলসি খোলা হয়েছে। তবে এলসি খোলা পরিমাণ সামান্য বাড়লেও নিষ্পত্তি কমে গেছে প্রায় সাড়ে ৯.৪৭ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডলার সংকটের মধ্যেও ৬ হাজার ৮১৯ কোটি (৬৮.১৯ বিলিয়ন) ডলারের ঋণপত্র খুলেছেন দেশের আমদানিকারকরা। আগের তুলনায় গত অর্থবছরে ১.৮৫ শতাংশ বেশি এলসি খোলা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬৯৫ কোটি ডলার (৬৬.৯৫ বিলিয়ন)। তবে তারও আগের বছর এলসি খোলার পরিমাণ আরও বেশি ছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ হাজার ৪২৬ কোটি (৯৪.২৬ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭২.৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৯.৪৭ শতাংশ।

ডলার সংকটে আমদানি ব্যয় কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত দেড় বছর ধরে আমদানি এলসি খোলায় শতভাগ মার্জিন রাখা, বিলাসদ্রব্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করাসহ অনেক পদক্ষেপই নিয়েছে। এতে আমদানি কমে দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের ট্রেড ও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্সের উন্নতি হলেও সরকারি ও বেসরকারি ঋণ পরিশোধের চাপ ও ট্রেড ক্রেডিট বাড়ায় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ঘাটতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, সংকট কাটাতে আমদানিতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে। তবে এসব যেন দেশের অর্থনীতিতে উল্টো ফল বয়ে আনছে। ডলার সংকটের এ সময়ে সবচেয়ে বেশি কমছে মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি। এর মানে দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কমছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়া সহজ হবে না বলে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, একক মাস হিসাবে গত জুনে দেশের ব্যাংকগুলো ৫.১৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছে। মে মাসে যা ছিল ৬.৮৩ বিলিয়ন ডলার। জুনে আমদানি এলসির নিষ্পত্তি কিছুটা কমেছে। গত জুন মাসে ব্যাংকগুলো আমদানি এলসির পেমেন্ট করেছে ৫.২ বিলিয়ন ডলার।  

বর্তমানে ব্যাংকগুলো এলসি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ১১৮.৬০ থেকে ১১৮.৯০ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করছে। এছাড়া রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করছে সর্বোচ্চ ১১৮.৫০ টাকা রেটে। রেমিট্যান্সের সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ সরকারি প্রণোদনা যুক্ত হচ্ছে। ক্রলিং পেগ ঘোষণার পর গত দুই মাস ডলার বাজার এক জায়গাল স্থিতিশীল আছে।

এসআই/এমএ