মৌসুমি ফলের দামে আগুন, লটকনের কেজি ২৫০
দেশে এখন চলছে ফলের মৌসুম। গ্রীষ্ম-বর্ষা দুই ঋতুতে সারা দেশে মেলে নানা জাতের দেশীয় ফল। বিশেষ করে জৈষ্ঠ ও আষাঢ় এই দুই মাসকে বলা হয় মধু মাস। আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, লটকন ও পেয়ারাসহ মুখরোচক ও রসালো সব ফল এই সময়ে পাওয়া যায়।
তবে মৌসুম হলেও এখন বাজারে এসব ফলের দাম অনেক বেশি। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা চাইলেও পছন্দের ফল কিনে খেতে পারছেন না।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৬ জুলাই) রাজধানীর নিউমার্কেট, বাড্ডা ও নদ্দা এলাকার ফলের দোকান ঘুরে দেখা যায় আম, আনারস, পেয়ারা, লটকন, জাম্বুরা, কাঁঠাল ও ডেউয়া বিক্রি করা হচ্ছে। মৌসুম শেষ হলেও কিছু কিছু জায়গায় এখনো লিচুও বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া আপেল, মাল্টা, আনারসহ সারা বছর পাওয়া যায় এমন ফলও রয়েছে।
দোকানে থাকা প্রায় সব ফলের দামই বাড়তি। ব্যবসায়ীরা জানান, আম ১৫০-২২০ টাকা, দেশি ও থাই লটকন ২৫০-২৮০ টাকা, আমড়া ৮০-১২০ টাকা, পেয়ারা ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জাম্বুরা (পিস) ১২০-১৫০ টাকা, কাঁঠাল আকারভেদে ১০০-৩০০ টাকা, আনারস (পিস) ৬০-৮০ টাকা এবং ডেউয়া ৩০-৫০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।
দেশীয় ফলের বেশি দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ চেইন, উৎপাদন সমস্যা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে মৌসুমি ফলের দাম বাড়তি। একইসঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলেও দেশীয় ফলের উৎপাদন কমে এসেছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি। সারের দাম, কৃষি শ্রমিকদের মজুরি এবং অন্যান্য উৎপাদন উপকরণের খরচ বাড়ার কারণেও দেশীয় ফলের দাম কিছুটা বেড়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেট এলাকার ফল বিক্রেতা আফরোজ মিয়া বলেন, এখন লটকনের দাম কিছুটা কমেছে। মৌসুমের শুরুতে এর চেয়ে ছোট লটকন ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হয়েছে। আর আমড়ার সিজন মাত্র শুরু হয়েছে।
নদ্দা এলাকার ভাসমান ফল বিক্রেতা কলিমউদ্দিন বলেন, দেশীয় ফলের চাহিদা যদি বেড়ে যায় এবং সরবরাহ সেই অনুযায়ী না বাড়ে, তাহলে দাম বাড়তি থাকে। বিশেষ করে মৌসুমি ফলের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। আবার ভরপুর ফলন হলে দাম কমে যায়।
ক্রেতারা বলছেন, লটকনসহ দেশীয় ফলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার, কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী দামে দেশীয় ফল কিনতে পারবে। এক্ষেত্রে কৃষকদের সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি কমানো যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেতারা।
শাহাদাত হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, এবছর প্রতিটি মৌসুমি ফলই বেশি দামে কিনতে হয়েছে। আম থেকে শুরু করে লিচু এবং এখন লটকনের বাজারদর খুবই চড়া। শহরে পরিবার-পরিজন নিয়ে যারা থাকেন তারা টুকটাক ফল কেনার জন্য চেষ্টা করেন। অতিরিক্ত দামের কারণে এখন অনেকে ফল কিনতে পারছেন না। কিনলেও অল্প পরিমাণে কিনছেন। গত বছরের তুলনায় এবার সব ফলের দামই বেশি মনে হচ্ছে।
নজরুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, এ বছরের মতো বাড়তি দাম আগে দেখিনি। পর্যাপ্ত মজুত ব্যবস্থা তৈরি করতে না পারলে সামনের বছর হয়ত আরও দাম বাড়বে। বিদেশি ফলের তুলনায় দেশীয় ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অনেক বেশি। সেজন্য মৌসুমি ফল অল্প হলেও কিনে খেতে চেষ্টা করি। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে এসব দেশীয় ফলের দামও নাগালে বাইরে চলে যাচ্ছে। এক কেজি পেয়ারাও ৮০-১২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
আরএইচটি/জেডএস