• জলবায়ুর প্রভাবে আমের উৎপাদন কম 
• সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
• ক্রেতার ঘাড়ে চড়া দামের খড়গ 

বাজারে ১০০ টাকার নিচে নেই কোনো ভালো মানের আম। হিমসাগর আম কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা। আর ভ্যান কিংবা ভাসমান দোকান থেকে অপরিপক্ব, ছোট ও কালচে দাগ পড়া আম কেনা যাচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। তবে, সেখানেও সাইজ কিংবা দেখতে সুন্দর আম কিনতে গুনতে হচ্ছে শতাধিক টাকা।

বাংলাদেশের রসালো ফল আম তার স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণের জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত। ভৌগোলিক অবস্থা ও আবহাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির আমের ফলন হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমের উৎপাদন হয় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরায়। এসব এলাকার পাকা রসালো আমের মিষ্টি স্বাদ ও গন্ধ এবং ভিন্ন ভিন্ন গঠন একেক প্রজাতির প্রতিনিধিত্ব করে। ফলে মৌসুমজুড়ে সারা দেশে বিভিন্ন আমের প্রচুর চাহিদা থাকে।

তবে, অন্যান্য বছর মৌসুমের শুরু ও শেষে আমের দাম চড়া থাকলেও এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। পুরো মৌসুমজুড়েই চড়া এবং আগের চেয়ে ঢের বেশি দাম দিয়ে আম কিনে খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ভরা মৌসুমেও কেজিপ্রতি আমের জন্য আগের বছরের তুলনায় আকার ও মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমের ফলন কম থাকায় খুচরা বাজারে চাহিদার তুলনায় আমের পরিমাণ কম। ফলে দাম কিছুটা বেশি।

এবার পুরো মৌসুমজুড়েই আমের দাম চড়া। ফলে বেশি দাম দিয়ে আম কিনে খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের / ছবি- ঢাকা পোস্ট
অন্যান্য বছর মৌসুমের শুরু ও শেষে আমের দাম চড়া থাকলেও এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। পুরো মৌসুমজুড়েই চড়া এবং আগের চেয়ে ঢের বেশি দাম দিয়ে আম কিনে খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ভরা মৌসুমেও কেজিপ্রতি আমের জন্য আগের বছরের তুলনায় আকার ও মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমের ফলন কম থাকায় খুচরা বাজারে চাহিদার তুলনায় আমের পরিমাণ কম। ফলে দাম কিছুটা বেশি

আমের বাড়তি দামের বিষয়টি উঠে এসেছে সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যেও। তারা বলছে, গত বছরের (২০২৩ সাল) জুনে পাইকারিতে প্রতি কেজি হিমসাগর আমের দাম ছিল ৪২ টাকা। এ বছর তা হয়েছে ৭৯ টাকা ৩২ পয়সা। গত বছর প্রতি কেজি ল্যাংড়ার দাম ছিল ৩৯ টাকা, এবার তা ৮০ টাকা ৮৬ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। ৪৩ টাকা কেজির আম্রপালি এবার বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা ৫৮ পয়সায়।

সোমবার (১ জুলাই) রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরার কৃষি বিপণন কর্মকর্তারাও আমের চড়া দামের কারণ হিসেবে কম ফলনের কথা উল্লেখ করেছেন।

সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) শাহানা আখতার জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমের বাজার আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। সরবরাহের ওপর আমের বাজারদর নির্ভর করে। এবার দেখা গেছে, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ফলন আগের তুলনায় কম হয়েছে। এ কারণে হয়তো চাহিদা অনুযায়ী আম না থাকায় দামটা বেশি মনে হচ্ছে। এমনিতে মৌসুমের শুরুতে দাম কম থাকে, এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। কিন্তু এবার শুরু থেকেই চড়া বলে মনে হচ্ছে।

আমের আকার, প্রজাতি ও মানের ভিত্তিতে দামের ভিন্নতা দেখা গেছে। বাজারে ১০০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো আম / ছবি- ঢাকা পোস্ট

একই তথ্য দিলেন সংস্থাটির রাজশাহী জেলা বিপণন কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আফরিন হোসেনও। তিনি বলেন, আমাদের পর্যালোচনা ও তথ্যানুযায়ী, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আমের উৎপাদন কম হয়েছে। এ কারণে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমের বাজার চড়া দেখা যাচ্ছে। তবে, আমাদের সার্বিক পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চলমান। গত বছরের তুলনায় স্থানীয় পর্যায়ে প্রতি কেজি আম ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সেজন্য চলতি মৌসুমে আমের দাম আর কমবে বলে মনে হচ্ছে না।

আমের মৌসুম সাধারণত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির আম বিভিন্ন সময়ে বাজারে আসে। যেমন- হিমসাগর আম জুনে, ল্যাংড়া ও ফজলি আম জুলাই-আগস্ট মাসে পাওয়া যায়। তবে প্রজাতি, আকার ও মানের ভিত্তিতে দামের ভিন্নতা দেখা গেছে। এর মধ্যে হিমসাগর আম প্রতি কেজি ১৫০-৩০০ টাকা, ল্যাংড়া ১০০-২৫০ টাকা, ফজলি ১০০-২০০ টাকা, আম্রপালি ১৫০-২৫০ টাকা এবং গোপালভোগ আম কেজিপ্রতি ১০০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে

অপরদিকে, সাতক্ষীরা এলাকায় ফলন কিছুটা ভালো হলেও সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে আমের উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অপু সরকার। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে তীব্র বাতাসে অপরিপক্ব অনেক আম পড়ে গেছে। যেগুলো গাছে থাকলে চলতি মৌসুমে ব্যাপক পরিমাণে হিমসাগর আম বাজারে পাওয়া যেত। এ এলাকায় আমের উৎপাদন যথেষ্ট ভালো ছিল। ঘূর্ণিঝড়ই বড় সমস্যা তৈরি করেছে।

ঢাকার বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে ফলের রাজা ‘আম’

পাকা ও রসালো আম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এটি বাংলাদেশের মানুষের জীবনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। আম খেতে কেবল মজাই নয়, বরং পুষ্টিগুণে ভরপুর ও স্বাস্থ্যকর। সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। তবে, বাজারভেদে পাকা আমের প্রজাতি ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে দামের ভিন্নতা দেখা গেছে। সরেজমিনে রাজধানীর নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি, আজিমপুর ও উত্তরা ঘুরে দেখা গেছে, এখন হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি ও গোপালভোগ পাওয়া যাচ্ছে।

তবে, কিছু জায়গায় শুধুমাত্র ১-২টি প্রজাতির আম পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, প্রধান আমের মৌসুম সাধারণত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির আম বিভিন্ন সময়ে বাজারে আসে। যেমন- হিমসাগর আম জুনে, ল্যাংড়া ও ফজলি আম জুলাই-আগস্ট মাসে পাওয়া যায়। তবে প্রজাতি, আকার ও মানের ভিত্তিতে দামের ভিন্নতা দেখা গেছে। এর মধ্যে হিমসাগর আম প্রতি কেজি ১৫০-৩০০ টাকা, ল্যাংড়া ১০০-২৫০ টাকা, ফজলি ১০০-২০০ টাকা, আম্রপালি ১৫০-২৫০ টাকা এবং গোপালভোগ আম কেজিপ্রতি ১০০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানি হচ্ছে জার্মানিতে / ছবি- ঢাকা পোস্ট 

আবার ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, নিউ মার্কেট ও মোহাম্মদপুর ছাড়াও বিভিন্ন সুপারশপ যেমন- আগোরা, মীনা বাজার ও স্বপ্নতেও বিভিন্ন প্রজাতির পাকা আম পাওয়া যাচ্ছে। এটি ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মও।

নিউ মার্কেট কাঁচাবাজার সংলগ্ন আমের দোকানের বিক্রেতা শাহীন মাহমুদ বলেন, একেক আমের একেক স্বাদ। যেমন- হিমসাগর স্বাদে অত্যন্ত মিষ্টি ও রসালো। ল্যাংড়া মিষ্টি এবং কিছুটা আঁশযুক্ত। ফজলি বড় আকারের ও রসালো। আম্রপালি ছোট আকারের কিন্তু খুব মিষ্টি। আবার গোপালভোগ খেতে যেমন মিষ্টি, সুন্দর ঘ্রাণও মেলে। সবগুলোর দামই একটু বেশি। কারণ, আমরা ভালো মানের আম আনি। এগুলো ১৫০ টাকা কেজি থেকে শুরু হয়। আপনি যদি এর চেয়ে কম দামে আম খেতে চান তাহলে অপরিপক্ব ফরমালিন দেওয়া আম খেতে হবে।

রবিউল ইসলাম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, আমের দাম মৌসুমের ওপর নির্ভর করে। এত দিন আমরা দেখেছি মৌসুমের শুরুতে ও শেষের দিকে দাম কিছুটা বেশি থাকত। কিন্তু এ বছর অবস্থা ভিন্ন। পুরো মৌসুমজুড়ে আমের বাড়তি দাম। আমাদের তো কিছুই করার নেই। আড়তে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। সে হিসাবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ে।

বাহ্যিকভাবে দেখে ভালো আম চেনার কোনো উপায় আছে কি না— জানতে চাইলে আব্দুল লতিফ নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘আম কেনার সময় দেখে কিনতে হবে। পাকা আমের কালার হবে সাধারণত সবুজের মধ্যে হলুদ, কমলা রঙের একটা ভাব থাকতে হবে। কালো দাগ থাকলে ওই আম কিনবেন না। তারপর আম নরম কিন্তু মজবুত হতে হবে। হাতের আঙুল দিয়ে চাপ দিলেই বুঝতে পারবেন। তাজা আমের জন্য সঠিক সময় এবং সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা আম কিনতে হবে।’

ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে এবার আমের উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে- বলছেন বিশেষজ্ঞরা / ছবি- ঢাকা পোস্ট

আমের ফলন কমার যে কারণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

এ বছর দেশে আমের উৎপাদন কম হওয়ার পেছনে আবহাওয়ার পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগবালাই ও কৃষিপ্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে বলে মনে করছেন কৃষি উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আমের উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাব্য একটি বড় কারণ হচ্ছে আবহাওয়ার পরিবর্তন। পাশাপাশি অসময়ের বৃষ্টিপাত বা খরা, তীব্র গরম বা ঠান্ডা, ঝড়-ঝঞ্ঝা ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেছে।

বিষয়টি নিয়ে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন কারণে আমের ফলন কমতে পারে। বিষয়টি বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। তবে, এসবের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। একসময় আমরা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেশি আম উৎপাদিত হতে দেখতাম। পরবর্তী সময়ে নওগাঁর সাপাহারসহ আশপাশের এলাকায় আমের উৎপাদন রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে যায়। ওই অঞ্চল আমরা বরেন্দ্রভূমি হিসেবে অভিহিত করি। সেখানে পানির তীব্র সংকটের কারণে অন্য কোনো ফসল উৎপাদন হতো না। পরে সেই এলাকায় অনেক ঘন-ঘন চারা লাগিয়ে আম চাষ শুরু হয়। কিন্তু গত দুই বছর ধরে ভূগর্ভস্থ পানির লেভেল আরও নিচে চলে যাওয়ায় আমের উৎপাদন কমেছে।

দ্বিতীয় কারণ হলো- এ বছর যখন আমের মুকুল আসে তখন প্রচণ্ড তাপমাত্রা ছিল। এ তাপমাত্রা মুকুল বা বটি থেকে ফল হতে দেয়নি। ফলে উৎপাদন অনেকাংশে কম হয়েছে।

‘ফলন কমে যাওয়ার আরও একটি প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। সেটি হচ্ছে- গাছ এক বছর ফলন বেশি দিলে পরের বছর কম দেয়। এটিকে অল্টারনেট বেয়ারিং হ্যাবিট বলা হয়। সে হিসেবে গত বছর যেহেতু ফলন বেশি হয়েছে, এ বছর কম হবে— এটি আমরা আগেই ধরে নিয়েছি। তবে, গাছের এ হ্যাবিট হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রণের একটি প্রবণতা শুরু হয়েছে। যা প্রাণ-প্রকৃতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ বয়ে আনছে। প্রকৃতিকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে। তা না হলে নানা বিপর্যয় ঘটবে।

আমের ফলন কম হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব- বলছেন বিশেষজ্ঞরা / ছবি- ঢাকা পোস্ট

আমের কম উৎপাদন প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে

দেশে আমের উৎপাদন কমে যাওয়া একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা’ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এ অবস্থা মোকাবিলা করা সম্ভব। কারণ, বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ছাড়া দেশের উৎপাদিত উচ্চমানের আম বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রধানত ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আম রপ্তানি করা হয়। আবার যুক্তরাজ্য, ইতালি, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়ও বাংলাদেশের আম বেশ সমাদৃত।

সাতক্ষীরার হিমসাগর আম। ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে এবার ফলন কম হয়েছে। তারপরও এটির রপ্তানি বেশ ভালো / ছবি- ঢাকা পোস্ট

রপ্তানির পরিমাণ ও মূল্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার টন আম রপ্তানি করা হয়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ প্রায় ১,৫০০ টন আম রপ্তানি করে। যার মূল্য প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

রপ্তানি করা আমের মধ্যে উচ্চমানের হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি ও আম্রপালি বেশ চাহিদাসম্পন্ন। এসব প্রজাতির আমের গুণগত মান ও স্বাদের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয়। যদি আম উৎপাদন কমে যায় তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন এ রাস্তা কিছুটা সংকুচিত হতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি আমের চাহিদা বেশ। সঠিক পরিকল্পনা, মান নিয়ন্ত্রণ ও বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমের রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব / ছবি- ঢাকা পোস্ট

এ জন্য আম উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দীর্ঘমেয়াদের পরিকল্পনা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক আবু হেনা রেজা হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি আমের চাহিদা বেশ। এটি আরও বাড়ানোর মাধ্যমে আম রপ্তানির নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। এ জন্য উন্নত প্রযুক্তি, আমের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ প্রচেষ্টায় এটি করা সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা, মান নিয়ন্ত্রণ ও বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে এ খাতে আরও উন্নতি করা সম্ভব।

‘এটি আমাদের নিয়মিত রপ্তানিযোগ্য পণ্য নয়। এরপরও ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এটি দেশের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আনতে পারবে। এবার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রপ্তানি করতে না পারলেও সামনের বছরের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে অন্তত ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’

আরএইচটি/এমএআর