ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরও একদফা ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। গত ২৫ এপ্রিল থেকে কোম্পানিগুলো ভোজ্য তেলের পাঁচ টাকা মূল্যবৃদ্ধি করে ১৪৪ টাকা করে। যদিও এ মূল্যবৃদ্ধিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছিল না।

পরে সোমবার (৩ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারস অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন লিটার প্রতি ৩ টাকা কমানোর কথা বললেও মূলত ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বোতলের তেল কেজিতে ২ টাকা বাড়িয়েছে মাহাজনরা (বড় ব্যবসায়ীরা)। অর্থাৎ যারা তেল আমদানি করেন যেমন, সিটি ও মেঘনা গ্রুপ। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তবে আগে যাদের তেল কেনা রয়েছে তারা আজ-কাল দু’দিন কম দামেই বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু তারপর দিন থেকে তেলের দাম বাড়বে।

মঙ্গলবার (৪ মে) রাজধানীর বাড্ডা কাঁচাবাজার ও মুদির দোকানগুলো দেখে গেছে, বেশির ভাগ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। আর খোলা সয়াবিন তেল কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকায়। তবে কয়েকটি দোকানে বোতলজান তেল ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

জানতে চাইলে বাড্ডা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী জিসান মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বোতলের তেলের দাম বাড়ছে। আজকে লিটারে ১ টাকা ৫০ পয়সা বেশি দামে কিনেছি। আমাদের বিক্রি করতে হবে ২-৩ টাকা বেশি দরে। বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বাড়লেও পামওয়েল কিংবা সরিষার তেলের দাম বাড়েনি বলে জানিয়েছেন তিনি।

তেলের দাম আবার বেড়েছে শুনে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বাড্ডার আদর্শ নগর থেকে আসা ক্রেতা আশকারী সিদ্দিক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাল শুনলাম তেলে দাম কমছে। আজ কিনতে এসে দেখি বাড়ছে। কার কথা বিশ্বাস করবো বলেন। সরকার কি দেখে না, ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে ফায়দা নিচ্ছে। আমাদের ফতুর করছে। সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীদের বিচারের আওতায় আনা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

বাজারগুলোতে, মঙ্গলবারও খোলা পামওয়েলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। আর বোতলজাত পামওয়েল তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। আর দেশি খাঁটি সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে কেজি ২০০ টাকায়।

সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারস অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রোজা ও মহামারিকালে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে তারা লিটারপ্রতি ৫ টাকার পরিবর্তে ৩ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থাৎ প্রতিটি লিটারে ২ টাকা বাড়িয়েছে।

ফলে গত মার্চে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৩৯ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন সেই সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৪১ টাকা লিটার। আর খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১১৭ টাকায় বিক্রি হলেও এখন থেকে তা ১১৯ টাকায় বিক্রি হবে।

সংগঠনের সচিব নুরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ভোজ্যতেলের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। গত বছরের জুন থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দামের অস্বাভাবিক বেড়েছে।

যেহেতু ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশেরও বেশি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়, সেহেতু সাম্প্রতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যে পরিমাণে মূল্য বেড়েছে, সে হিসেবে আমাদের বাজারে বাড়েনি।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিতভাবে দেশীয় উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, আমদানি পরিস্থিতি এবং স্থানীয় বাজার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য অতিমাত্রায় বাড়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গড়ে লিটারপ্রতি ৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রমজান এবং করোনার সময়ে ভোক্তা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত প্রতি লিটার ৩ টাকা ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এমআই/এসএম