ব্যস্ত নগরে অনেক কিছুর সঙ্গে বদলে গেছে খাদ্য সংস্কৃতি। পছন্দের স্পেশাল খাবারটি খেতে এখন অনেকেই বাসায় রান্নার ঝক্কি নেন না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফোনে এক ক্লিকেই পৌঁছে যাচ্ছে গরম-গরম খাবার। বাসা কিংবা অফিসে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন পছন্দের রেস্তোরাঁর স্পেশাল আইটেম।

এই সেবাটিকে আরও সহজ ও আধুনিক করেছে ফুডি। উন্নত সার্ভিস, খাবারের মান ও পরিমাণে গুরুত্ব দিয়ে ফুড-দুনিয়ায় সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে এই ফুড সার্ভিসটি। ফুড লাভারদের সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট সুবিধা নিয়ে অল্পদিনেই জনপ্রিয়তার শিখর ছুঁয়েছে ফুডি।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, শুধু খাবার নয়, প্রিয়জনকে আপনার পছন্দের ফুল পৌঁছে দেবে তারা। এক অ্যাপেই মিলবে এ সুবিধা। তারা বলছে, বাংলাদেশের বাজারে এটি একেবারেই নতুন সেবা। 

ফুডি কর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি ৮ জেলা শহরের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ফুডি। শিগগিরই বাকি জেলাগুলোতেও কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীর তিন এলাকা— গুলশান, বনানী, বারিধারার গ্রাহকরা ২৪ ঘণ্টা খাবার অর্ডার করতে পারবেন। শিগগিরই অন্য এলাকার গ্রাহকরাও ৩৬৫ দিন এ সেবাটি পাবেন। ফুড পার্টনার হিসেবে ফুডির সঙ্গে রয়েছে ৫ হাজার রেস্তোরাঁ। যেখানে রয়েছে লক্ষাধিক আইটেম।

ফুডির চিফ মার্কেটিং অফিসার মাশরুর হাসান মীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ও মানসম্মত সেবাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। এছাড়া খাবারের দামের বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হয়েছে। কারণ খাবার খেতে গিয়ে গ্রাহককে যদি অতিরিক্ত দাম দিতে হয় সেটি তার জন্য বাড়তি ভোগান্তি।’

তিনি বলেন, ‘খাবারের মান ও পরিমাণের বিষয়টিও গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা এ বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করছি যেন একজন গ্রাহক রেস্টুরেন্টে বসে খেলে যে পরিমাণে খাবার পান সেটি যেন ডেলিভারির ক্ষেত্রেও নিশ্চিত হয়। রেস্টুরেন্টগুলোর সঙ্গে আমাদের এমন চুক্তি হয়েছে।’ 

প্রিয়জনকে পছন্দের ফুল পৌঁছে দেবে ফুডি— এমন সেবাটিকে ফুডির সারপ্রাইজ সেবা আখ্যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ এই মার্কেটিং কর্তা বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ হলো, ফুডি অ্যাপস ব্যবহার করে যে কেউ চাইলেই ফুল দেখে কিনে নিতে পারবেন। এ বিষয়ে আমরা অনেক ভালো সাড়াও পাচ্ছি। এছাড়া ডাইন ইন অর্থাৎ রেস্টুরেন্টে বসেও আমাদের অ্যাপসের মাধ্যমে ক্রেতারা খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। আর পিকআপ সার্ভিস তো আছেই। এই বিষয়গুলো মার্কেটে অন্যদের থেকে আমাদেরকে অনেক বেশি এগিয়ে রাখছে।’

মাশরুর হাসান মীম বলেন, ‘ইতোমধ্যে লক্ষাধিক গ্রাহক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। তারা ফুড অর্ডার দিচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এর সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম মাসে যে পরিমাণ প্রত্যাশা ছিল তার চেয়েও বেশি সাড়া পাচ্ছি।’ 

ফুডির সেরা রেস্টুরেন্ট পার্টনার ও শক্তিশালী রাইডারপুল নিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু ক্রেতা নন রেস্টুরেন্ট পার্টনারদের কাছ থেকেও পজিটিভ সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে রাইডারপুল। এখানে তাদের আয় অন্যান্য জায়গা থেকে এখানে অনেক বেশি। তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি গ্রাহকদের সঙ্গে সুন্দর কমিউনিকেশন স্কিল নিয়েও কাজ কাজ করা হচ্ছে।’

ফুডির চীফ অপারেটিং অফিসার মো. শাহনেওয়াজ মান্নান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ফুড ডেলিভারির ব্যাপারটি চ্যালেঞ্জিং। কারণ গ্রাহকের অর্ডারের পর খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে তার চাহিদা অনুপাতে তৈরি করা খাবার পৌঁছে দিতে হয়। আমরা এই চ্যালেঞ্জটাই নিয়েছি। এখানে রাইডার, গ্রাহক এবং আমাদের রেস্টুরেন্ট পার্টনার সবার কথাই চিন্তা করা হয়েছে। আমরা এমনভাবে অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট করেছি যেখানে আন্তর্জাতিক মানের দিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। চাইলে ভয়েস কমান্ড দিয়েও অ্যাপস থেকে অর্ডার করা যাবে। আমরাই প্রথম একই অ্যাপস থেকে ফুলের অর্ডার ডেলিভারি দিচ্ছি। ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি সার্ভিস চার্জ নিচ্ছি না।’

চুক্তিভিত্তিক বা বেতনভুক্ত ছাড়াও পার্টটাইম জব হিসেবে যে কেউ চাইলে ফুড রাইডার হিসেবে কাজ করতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন রাইডার যখন নতুন করে জয়েন করছেন তাকে আমরা ফ্রিতে ব্যাগ, দুটি টি-শার্ট, ক্যাপ, ওয়াটারপ্রুফ মোবাইল প্যাক, রেইনকোট দিচ্ছি। দায়িত্ব পালনের সময় কোনো সময় যদি তাদের কোনো জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন হয় সেটিও কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হবে। তাছাড়া আমাদের নারী রাইডারও রয়েছেন। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র ঢাকাতেই প্রায় ১ হাজারের বেশি ফুড রাইডার কাজ করছেন। আমরা এরই মধ্যে বিভিন্ন বিভাগ এবং জেলাতেও সার্ভিস চালু করেছি। খুব শিগগিরই সারাদেশে পুরোদমে ফুডির কার্যক্রম চালু হবে।’

৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা গ্রাহকদের সুবিধার্থে ফুডির সার্ভিস চলমান থাকবে উল্লেখ করে শাহনেওয়াজ মান্নান বলেন, ‘‘গত মাসের (জুন) ৩ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিচ্ছি। গুলশান, বানানী, বারিধারার গ্রাহকরা আপাতত এই সুবিধা পাচ্ছেন। আমাদের পক্ষ থেকে কাস্টমারদের বেস্ট সার্ভিস দেওয়ার জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা করে রেখেছি। তারপরও কোনো গ্রাহক যদি কোনো ধরণের সমস্যায় পড়েন তাহলে ২৪ ঘণ্টা আমাদের সাপোর্ট সেন্টারে ফোন করে সমাধান করতে পারবেন। কাস্টমারদের বলবো ‘জাস্ট অর্ডার অ্যান্ড স্মাইল’ বাকি দায়িত্ব আমাদের।’’

ফুডির টেকনিক্যাল কার্যক্রমের বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘টেকনোনেক্সট সফটওয়্যার লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটির চিফ ডিজিটাল অফিসার মো. হাসিবুল হাসান জানান, টেকনো নেক্সট সফটওয়্যার লিমিটেড ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দ্রুতই আমরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। আমরা প্রযুক্তিকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে উদ্ভাবনী সফটওয়্যারের কাজ করে যাচ্ছি। 

হাসিব বলেন, টেকনো নেক্সট একটি প্রতিভাবান টিমের মাধ্যমে পরিচালিত, যারা চ্যালেঞ্জ সমাধানে এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা প্রদানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটি সততা, অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক দায়িত্বকে প্রাধান্য দেয়, ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তাছাড়া প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ গঠনে নিজেদের অংশীদারত্ব ধরে রাখতে টেকনো নেক্সট সফটওয়্যার লিমিটেড উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এএসএস/আরএইচটি/এমএসএ