বাংলাদেশে স্বনামধন্য বড় বড় ব্যবসায়ী থাকলেও তার মধ্যে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন পুরান ঢাকার হাকিমপুরী জর্দার ব্যবসায়ী মো. কাউছ মিয়া। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে সর্বোচ্চ আয়কর জমা দিয়ে টানা ১৫ বার সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরেও সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে কাউছ মিয়াকে সেরা করদাতা নির্বাচিত করা হয়েছিল।

সোমবার (২৫ জুন) রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশের শীর্ষ করদাতা হাজী মো. কাউছ মিয়া মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।

এ বিষয়ে কাউছ মিয়ার নাতি আনোয়ার সাদাত বলেন, আমার নানা বার্ধক্যসহ নানা জটিলতায় দেড়-দুই বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাকে দেশে আনা হয়। এরপর থেকে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার বাসায় শয্যাশায়ী ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আজগর আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দুইদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন। 

৯৪ বছর বয়সী এ ব্যবসায়ী মৃত্যুকালে স্ত্রী, আট ছেলে ও আট মেয়ে রেখে গেছেন। ২০০৮ সাল থেকে কাউছ মিয়া দেশে ব্যবসায়ী শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতাদের একজন। গত ৬১ বছর ধরে কর দিয়ে আসছেন তিনি। প্রথম কর দেন ১৯৫৮ সালে।

চাঁদপুর জেলার রাজরাজেশ্বর গ্রামে (ব্রিটিশ আমলের ত্রিপুরা) ১৯৩১ সালের ২৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন কাউছ মিয়া। বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারে মুদি দোকান চালু করেন।

পরে ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট ছিলেন। এরপর ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ চলে আসেন এবং তামাকের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ৪০-৪৫ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। তবে তার মূল ব্যবসা তামাক বেচাকেনা।

তিনি দীর্ঘদিন চাঁদপুর জেলা শহরের পুরান বাজারে ব্যবসা করেন। পরে হাজীগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ এবং পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ব্যবসা করেন।

হাকিমপুরীর জর্দার পাশাপাশি তার বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা ছিল। ২২ বছর বয়স থেকে ব্যবসা শুরু করে টানা ৭১ বছর এককভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি।

মায়ের দেওয়া আড়াই হাজার টাকার পুঁজিতে ১৯৫০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সফলভাবে ব্যবসা করে আজ বিপুল নগদ অর্থ-বিত্তের মালিক কাউছ মিয়া। ১৯৪৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন এই ব্যবসায়ী। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দামামায় আর পড়াশোনা এগোয়নি। কিশোর বয়সেই চাঁদপুর শহরে ব্যবসায়ী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। 

তামাকের ব্যবসা থেকেই তার মাথায় আসে জর্দা উৎপাদনের কথা। প্রথমে একটা ছোট কারখানা দিয়ে বাজারে ছাড়লেন ‘শান্তিপুরী জর্দা’, পরে সেটি নকল হতে থাকায় নতুন করে চালু করলেন ‘হাকিমপুরী জর্দা’ নাম দিয়ে, ১৯৯৬ সাল থেকে।

আরএম/কেএ