২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সম্পর্কে সানেমের পর্যবেক্ষণ মোট বাজেটের মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে। যা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এ খাতে বরাদ্দের হার পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) এক বিবৃতিতে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বাজেট বরাদ্দে উল্লেখযোগ্য ওঠানামা দেখা গেছে, যার মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল সর্বোচ্চ। অতঃপর পরবর্তী দুই অর্থবছরে (২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১) এই খাতে বরাদ্দ যথাক্রমে ১০ দশমিক ৯১ এবং ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে শুরু করে, বরাদ্দের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে নয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মধ্যে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাজেটের মাত্র ৪ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশে। এ চিত্র দেশের জ্বালানি খাতের প্রতি ধারাবাহিক গুরুত্বহীনতার ইঙ্গিত দেয়।

অন্যদিকে, জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত গত এক বছরে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) চারবার বিদ্যুতের ট্যারিফ হার বৃদ্ধি করেছে, যথাক্রমে ৫%, ৫%, ৫% এবং ৮.৯% হারে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের সূচনা করা হয়েছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য, কিন্তু মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রদানে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। বিপিডিবির একটি হিসাবে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে এক টাকা অবমূল্যায়ন ভর্তুকি প্রদানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে ৪৭৩ দশমিক ৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে (১০৭ দশমিক ৭ প্রতি ডলার থেকে ১১৭ প্রতি ডলার) এই বছরের ভর্তুকির বোঝা বেড়ে হতে পারে ৪ হাজার ৪০৪.৪৮ কোটি টাকা। এই খাতে সরাসরি কর-ব্যয়ের (কর মওকুফ) শতাংশ ইতিবাচক হলেও, প্রকৃত পরিমাণ গত বছরের ১১ হাজার ৯৪২.১৪৭ কোটি টাকা থেকে কমে ৭ হাজার ৬১১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যা এই খাতের জন্য কর-সুবিধার পরিমাণ হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়।

বিভিন্ন সরকারি পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা থাকা সত্ত্বেও, প্রস্তাবিত বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন ও ব্যবহার বাড়ানোর জন্য মাত্র ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া, স্রেডা গত বছরের তুলনায় কম বরাদ্দ (১১ দশমিক ১৯ কোটি) পেয়েছে, যা গত বছর ছিল ১৪ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা। যদিও এই বরাদ্দ গত বছরের সংশোধিত বাজেটে মাত্র ৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছিল, যা স্রেডার কার্যকারিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে।

বিবৃতিতে সানেম জানায়, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আরো উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ৯১৪৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার ২৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন। নতুন এলএনজি অবকাঠামো নির্মাণও প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম অস্থিতিশীল থাকে, যা ইতোমধ্যে আমাদের অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। যেহেতু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্যাস-চালিত, জ্বালানির অপর্যাপ্ত মজুদের যে বিদ্যমান অবস্থা, তাতে বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে, একটি স্থিতিশীল এবং বিকল্প জ্বালানি উৎসের বন্দোবস্ত অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। 

স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ৪৮টি কূপ খনন করার পরিকল্পনা করেছে বাপেক্স। তবে, গত ফেব্রুয়ারি ২০১৪ থেকে দশ বছরে বাপেক্স ৪৯টি কূপের কূপ খনন করেছে, যার সঙ্গে এই লক্ষ্যমাত্রা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং চুক্তি (পিএসসি) ২০২৩ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা ৯টি অগভীর এবং ১৫টি গভীর সমুদ্র ব্লকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলিকে নিযুক্ত করার জন্য 'বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড-২০২৪’ শুরু করেছে। এগুলো আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ হলেও এতে বেশ অনিশ্চয়তা, কালবিলম্ব এবং খরচের বাহুল্য রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, আমাদের জ্বালানি উৎসগুলোকে বৈচিত্র্যময় এবং নবায়নযোগ্য সম্ভাবনাগুলো অন্বেষণ করতে হবে, কারণ এটি সবচেয়ে নিশ্চিত ও টেকসই পদ্ধতি।

ওএফএ/এসএম