বাজেটে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাত নিয়ে সরকার দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।‌ সংস্থাটি মনে করে, বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের বরাদ্দ কমিয়ে এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়িয়ে আইএমএফ- এর প্রেসক্রিপশন ফলো করছে সরকার। ‌

গত কয়েক বছর এইখাতে যে অদৃশ্য বাজেট ছিল সেটি এবারও অব্যাহত রয়েছে। সেটি এখনই বন্ধ করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ যে আইনটি রয়েছে, সেই আইনটি দ্রুত বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।‌

রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক ইন‌ সেন্টারে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে ‘পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টরে চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক‌ প্রেজেন্টেশনে এ তথ্য জানান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।‌

তিনি জানান, সারা দেশে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্য বলছে সরকার। একদিকে সরকার বলছে, চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, অন্যদিকে শহর ও মফস্বল এলাকার প্রচুর লোডশেডিং হচ্ছে। এমনকী শীতেও‌‌ লোডশেডিং হয়েছে, তাহলে সমস্যা আসলে রয়ে গেছে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার বিদ্যুৎ কাছে ভর্তুকি এবং বরাদ্দ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।‌ এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমবে‌‌, ফলে সারা দেশে লোডশেডিং বাড়বে।‌ এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তরা।

বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ২৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে অনেক কম।‌ বাজেট কম হওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমবে, আর বিদ্যুৎ উৎপাদন কমলে সারাদেশে লোডশেডিং বাড়বে, শিল্প কারখানা উৎপাদনের স্থবিরতা নেমে আসবে। ‌

সরকার বিদ্যুৎ খাত নিয়ে গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়েছে উল্লেখ্য করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার একদিকে বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছে।‌‌ অন্যদিকে বিপিডিসি‌ বলছে, বছরে তাদের ৩‌ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লাভ হচ্ছে।

তিনি বলেন, আইএমএফ-এর শর্ত শুনে সরকার বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা এ‌ টেকসই সমাধান হবে না এবং এ খাতের সমস্যা সমাধান হবে না। ‌বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানোর জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে বাজেট কমানোর জন্য‌ তা ফলপ্রসু হবে না। এর ফলে‌ সরকার বিদ্যুতের ভর্তুকি কমাতে একদিকে দাম বাড়াবে। এতে এ খাতের সংকট ও অব্যবস্থাপনা থেকেই যাবে।

বিদ্যুতের জন্য সরকারের বিশেষ অ্যাক্ট বাতিল করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই অ্যাক্টের কারণে এখনো প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদনে আসতে পারছে না বিদ্যুতের বিভিন্ন কোম্পানি।‌

প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি ফান্ড রাখা হয়েছে, যা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এ বরাদ্দ যেন‌ সঠিক ব্যবহার হয় সেদিকে নজর রাখার দাবি জানান তিনি।

বিদ্যুৎ জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিকে আরো শক্তিশালী হওয়ার দাবি জানান গোলাম মোয়াজ্জেম। সংসদীয় কমিটিকে প্রতি মাসে একটি মিটিং করে মন্ত্রণালয়ের কাজের তদারকিগুলো আরো বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে হামিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম, শামসুল ইসলামসহ এ খাতের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

এনএম/এসএম