প্রবৃদ্ধি নিয়ে এডিবির পূর্বাভাস মেলাতে পারছেন না ড. জাহিদ
করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অর্জনে ভালো করবে। চলতি অর্থবছর এ হার ৫.৫ থেকে ৬ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
গত বুধবার (২৮ এপ্রিল) ‘এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউটলুক’ প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞাপন
জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে এডিবি’র এ পূর্বাভাসের হিসাব কোনোভাবেই মেলাতে পারছেন না বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ও অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
প্রতিবেদনে এডিবি জানান, রেমিটেন্সের শক্তিশালী প্রবাহ অব্যাহত থাকায় ব্যক্তিখাতে ভোগব্যয় বাড়বে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগেও গতি আসবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ধীরে ধীরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ধারায় ফিরবে। অঞ্চল হিসেবে এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সবচেয়ে দ্রুত হবে। ২০২০ সালে যেখানে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ৬ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছিল, এবার তা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়বে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ ভারত যদিও মহামারিতে নাজুক অবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে, তারপরও এ বছর সেখানে ১১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। গতবছর ভারতের অর্থনীতি ৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল।
বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ও সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি নিয়ে এডিবি কিসের ভিত্তিতে বলেছে, সেটা আমি ভালো করে বুঝতে পারিনি। এই বিষয়টা আমার কাছে একটু আশাবাদী মনে হয়। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কাটা না এলেও অর্থাৎ গত বছরের পরিস্থিতিও যদি থাকতো তাহলেও সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মতো কোনো সূচকে দেখিনি। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত যেসব তথ্য আছে, রফতানি, আমদানি, ঋণ প্রবাহ, রাজস্ব আহরণ এগুলোতে সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশের লক্ষণ দেখা যায়নি। এক্সপোর্ট তো এখন পর্যন্ত ৯ মাসের ডাটা আছে। তাতে দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এক্সপোর্ট বাড়েনি। বরং সামান্য কম।’
ড. জাহিদ বলেন, ‘যন্ত্রপাতির আমদানির সূচক এখনো ঋণাত্মক। মানে আগের বছরের তুলনায় অনেক কম। সেখানেও প্রবৃদ্ধি নেই। সরকারি ব্যয় এবং এডিপি ব্যয় আগের বছরের প্রথম আট মাসে বাস্তবায়ন গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন। মোট বাজেটের মাত্র ৩৩ শতাংশ ব্যয় হয়েছে প্রথম আট মাসে। সেখানেও তো তেমন প্রবৃদ্ধি নেই। আর ভোক্তা ব্যয় জিডিপির যেটা বড় অংশ সেখানে আমরা প্রথম আট মাসে তেমন লক্ষণ দেখিনি, যেটা ভ্যাট কালেকশন থেকে কিছুটা আঁচ করা যায়। কারণ ভ্যাট তো ভোক্তা ব্যয়ের ওপরেই বেশি আসে, যদিও ভ্যাট কালেকশন কিছুটা উন্নতি করেছে। তাতেও এখানে এতো বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষণ দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘গত মার্চ মাসে করোনার প্রথম ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি একটা খাদের ভেতরে পড়ে গিয়েছিল। সেই খাদ থেকে উঠে আসাটাই হচ্ছে রিকভারি। কিন্তু খাদ থেকে উঠে আসার পরে যেই যাত্রাটা অব্যাহত থাকবে এগিয়ে যাওয়ার সেটাই হলো প্রবৃদ্ধি। আমরা খাদ থেকে উঠে আসার অনেক লক্ষণ দেখেছি। বিভিন্ন জরিপে দেখেছি রিকভারি হয়েছে। অনেক জরিপে দেখা গেছে, মাথাপিছু আয় আগের পর্যায়ে কাছাকাছি চলে আসছে, কিন্তু আগের পর্যায়ে এখনো পৌঁছায়নি। আগের পর্যায়ে ছাড়িয়ে না যাওয়া পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি বাড়ার প্রশ্নই আসেনা। ওই ধরনের কোনো লক্ষণ, জরিপভিত্তিক তথ্য বা সামষ্টিক অর্থনৈতিক তথ্য দেখা যায়নি, সেজন্য এডিবির হিসাবটা আমার কাছে একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এডিবি তাদের প্রতিবেদনে বলেছেন যে তারা বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা ধরতে পারেনি। তারা বলেছে, এ জরিপ মার্চ মাসের দিকে করা হয়েছিল, তাই দ্বিতীয় ধাক্কার বিষয়টা তারা আমলে নিতে পারেনি। দ্বিতীয় ধাক্কার প্রভাব যদি আমলে নেওয়া হত, তাহলে এডিবি’র প্রবৃদ্ধির হিসাব আরও কমে যেত। আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, যে আপনি এমন কিছু কি দেখছেন যার ভেতরে আমরা আশা করতে পারি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ বা ৬ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব? আমার উত্তর হবে, আমি এ ব্যাপারে খুবই অসহায়। আমি কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। আমার মনে হয় না, এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।’
এসআর/এসএম