আর মাত্র একদিন বাকি। তারপরেই সারাদেশে ব্যাপক আনন্দ, উৎসাহ-উদ্দীপনা আর ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। অবশ্য এটি কোরবানির ঈদ হিসেবেই সবার কাছে বেশি পরিচিত। এই ঈদে প্রাধান্য পায় হাট থেকে পছন্দের পশুর কেনা। তবুও ঈদ বলে কথা। নতুন জামা কাপড় বিশেষ করে পায়জামা-পাঞ্জাবি না হলে অনেকের কাছেই ঈদ যেন জমে না। তাই তো আগ মুহূর্তে মানুষের ভিড় লেগেছে পায়জামা-পাঞ্জাবির দোকানে। একইসঙ্গে নতুন প্যান্ট-শার্ট, টিশার্ট, শাড়ি, থ্রি পিস, বাচ্চাদের পোশাক কিনতেও মার্কেট, বিপণী বিতান এবং ফুটপাতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

শনিবার (১৫ জুন) রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার বায়তুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষ্যে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভিন্নভাবে দোকানগুলো সাজানো হয়েছে। ক্রেতা টানতে বাহারি রং এবং ডিজাইনের বিভিন্ন পাঞ্জাবি দোকানের সামনে টানিয়ে রাখা হয়েছে। আর সকাল থেকেই এসব পাঞ্জাবি-পায়জামার দোকানগুলোতেও বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভিড় করছেন। ফলে সবগুলো দোকানের বিক্রয় কর্মীরাই পার করছেন ব্যস্ত সময়। একের পর এক ক্রেতার পছন্দের পাঞ্জাবি খুলে দেখাচ্ছেন তারা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানান ডিজাইন এবং কালেকশনের ক্যাটালগ খুলেও দেখাচ্ছেন বিক্রেতারা।

দোকানিরা জানান, গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বিকেল থেকেই এই এলাকার দোকানগুলোতে পায়জামা-পাঞ্জাবির জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয়েছে। যা চলেছে গভীর রাত পর্যন্ত।

মার্কেটের নূর ফ্যাশন হাউজের বিক্রেতা আরিফ বিল্লাহ বাকি বলেন, এই ঈদে সাধারণত কাপড়ের কেনাকাটা মানুষজন কম করেন। কোরবানির ঈদে বেশিরভাগ মানুষই রোজার ঈদের জামা দিয়ে কাটিয়ে দেয়। তারপরও ঈদ উপলক্ষ্যে অনেকে নতুন জামা কাপড় কেনেন। বিশেষ করে যারা গ্রামের বাড়িতে যান তারা পরিবার-পরিজন কিংবা কাছের মানুষজনকে উপহার দেওয়ার জন্য পায়জামা-পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে যান। সেজন্য দোকানগুলোতে আমরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নেই। যদিও এটি রোজার ঈদের মতো ব্যাপক হয় না। শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই এই মার্কেটে ক্রেতার উপস্থিতি বেড়েছে। আজকেও সকাল থেকে বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। তবে গতবছরের তুলনায় এবার মানুষের উপস্থিতি অনেকটা কম বলে মনে হচ্ছে।

মার্কেটের আরেক পাঞ্জাবির ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহান বলেন, এখানে সব ধরনের পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। সেজন্য মানুষ ভিড় করে। আসলে ঈদের পরে অনেকের বিয়ে কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকে। সেজন্য নতুন পাঞ্জাবির কদর রয়েছে। দাম গতানুগতিকই আছে। রোজার ঈদের তুলনায় দাম বাড়েনি আবার একেবারে কমেও যায়নি।

আবার নিউমার্কেট এলাকার অন্য কাপড়ের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে শার্ট এবং টিশার্টের দোকানগুলোতেই তরুণ-তরুণীদের ভিড় করতে দেখা গেছে।

বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে পছন্দের জামা-কাপড়, পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট-প্যান্ট, জুতা, শাড়ি, থ্রিপিস, বাচ্চাদের কাপড় কিনছেন তারা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় নিউমার্কেটের মূল অংশের ভেতরে। এর বাইরে গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টারের ভেতরেও জমজমাট বেচাকেনা চলছে।

ক্রেতারা বলছেন, ঈদের সময় আবহাওয়া উপযোগী নতুন কাপড় কেনার জন্যই তারা মার্কেটে এসেছেন। অনেকেই আবার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন পরিবার-পরিজনও।

জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে যাব। সেজন্যে হাফ হাতা টিশার্ট এবং সুতি কাপড়ের শার্ট কেনার জন্য নিউমার্কেটে এসেছি। এখনো কোনো কাপড় পছন্দ হয়নি। বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখছি।

মার্কেট ছাড়াও ভিড় দেখা গেছে ফুটপাতেও। বিশেষ করে ভ্রাম্যমাণ অস্থায়ী দোকানগুলোতে জুতা, ওড়না, শার্ট, টুপি, কানের দুল এবং ছোট বাচ্চাদের পোশাকের দোকান ঘিরেই মানুষজনকে ভিড় করতে দেখা গেছে।

আরএইচটি/জেডএস