দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের ধর্মীয় এই উৎসবকে ঘিরে এক সপ্তাহ আগে থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাজার সিন্ডিকেট। ঈদে যে পণ্যগুলোর চাহিদা থাকে সবার শীর্ষে, ইতোমধ্যেই দফায় দফায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর দাম। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একদিনের ব্যবধানেই কেজিপ্রতি মরিচের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা, আর সপ্তাহের মধ্যেই বেড়েছে ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত।

শুক্রবার (১৪ জুন) রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বিক্রেতারা বিষয়টি সরবরাহের সংকট বললেও ক্রেতারা ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীদের শক্ত সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের বাজারে দেশি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত, বিদেশি (ভারত) কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি করে। এ ছাড়া, প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি করে এবং লাউ প্রতি পিস ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও বাজারে কাঁচামরিচ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হতো। এরপর আরও এক দফায় দাম বেড়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ১৬০ টাকায়। তবে এক রাতের ব্যবধানেই সেটির দাম বেড়ে এখন ২৪০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে কিছুটা নিম্নমানের কাঁচামরিচ কোথাও কোথাও ২২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

গতবার (২০২৩) ঠিক এই সময়ে ঈদুল আজহার আগে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে ৭০০ টাকায় উঠেছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সময়ে দেশে কাঁচামরিচের কিছুটা ঘাটতি থাকে, সে কারণে দাম বেড়ে যায়। তখন আমদানি করে কাঁচামরিচের ঘাটতি মেটানো হয়। আর যদি মাঝেমধ্যে আমদানি ব্যাহত হয়, তখন দামটা লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে।

বাড্ডা পাঁচতলা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সামছুল হক জানান, গতকালও কাঁচামরিচ বিক্রি করেছি ১৬০ টাকা কেজি। আজ সকালে যখন আড়তে গেলাম, তখন দাম দেখে চোখ কপালে উঠেছে। আজ দেশিটা ২৪০ এবং ইন্ডিয়ান কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।

দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, দাম বাড়লে কিছু তো করার নেই। দাম বাড়লে আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হয় এবং সেভাবে বিক্রি করতে হয়। মনে হচ্ছে বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। বিশেষ করে শুক্রবারে ইন্ডিয়ান কাঁচামরিচের সংকট থাকে। তাই অন্যান্য দিনের তুলনায় দামটাও বেশি থাকে।

সবজি বিক্রেতা সায়েদুল ইসলাম বলেন, কিছু জিনিসের দাম শুক্রবার এলে এমনিতেই বেড়ে যায়, যেমন- শসা, টমেটো, গাজর, কাঁচামরিচ। শুক্রবার এলে এই জিনিসগুলোর চাহিদাও বাড়ে, দামও বাড়ে।

অন্যান্য সবজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার দাম একটু বাড়তি। গরম কমলে সামনে দাম কিছুটা কমতে পারে।

বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সাইদুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগেও এক পোয়া কাঁচামরিচ কিনেছি ৪০ টাকায়, আজ সেটা কিনলাম ৬০ টাকায়। সবকিছুর দাম বাড়তি যাচ্ছে, সেখান থেকে আমাদের ছাড় দেয়নি কাঁচামরিচও। এটারও এখন বাড়তি দাম। গত সপ্তাহেও যে কাঁচামরিচ কিনেছি ১৪০ টাকা কেজি, আজ ২৪০ টাকা দরে কিনে খেতে হচ্ছে। আমার তো মনে হচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে এতো দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের শক্ত সিন্ডিকেট দায়ী। তারা অধিক লাভের আশায় ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, গত বছর কোরবানি ঈদের আগে কাঁচামরিচ ৭০০ টাকা কেজি ছিল, চলতি বছর এ সময়ে এসে তা ২৪০ টাকায় ঠেকেছে। ঈদের তো আরও সময় বাকি, না জানি কত টাকায় গিয়ে ঠেকে কাঁচামরিচের দাম। 

এর আগে গত বছরের জুলাই মাসেও ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়। এ ছাড়া, দেশের কোথাও কোথাও হাজার টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রির খবর পাওয়া যায়। এরপর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ভারতের মরিচ আসায় গত ৩ জুলাই রাজধানীর বাজারে মরিচের দাম এক লাফে কেজিতে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমে যায়।

টিআই/এমজে