ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজধানীতে বসেছে ২২টি পশুর হাট। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব হাটে গরু আসছে। কিছু কিছু হাটে শুরু হয়েছে বেচাকেনা, তবে এখনো পুরোপুরি জমে ওঠেনি।

ব্যাপারীরা বলছেন, যারা এখন গরু দেখতে আসছেন তারা খুব একটা কিনছেন না। দাম জিজ্ঞেস করে মোবাইলে ছবি তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ এসে ‘উল্টাপাল্টা’ দাম বলছেন। এতে বিরক্ত ও হতাশ হচ্ছেন বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, আড়াই লাখ টাকার গরুর দাম বলছে এক থেকে দেড় লাখ। জানি না এই বাজারে শেষ পর্যন্ত কী হয়।

মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর বনশ্রী এলাকার মেরাদিয়া হাটে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটিতে স্থায়ী দুটিসহ এবার মোট ২২টি স্থানে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গাবতলীতে স্থায়ী হাট ব্যবহারের পাশাপাশি ৯টি অস্থায়ী হাট এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সারুলিয়ায় স্থায়ী মার্কেটের পাশাপাশি ১১টি অস্থায়ী হাট স্থাপন করেছে। তবে এ বছর আদালতের নির্দেশনার কারণে আফতাবনগরে বসছে না হাট।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আফতাবনগর হাট বন্ধ থাকায় পশু ও ক্রেতাদের চাপ পড়বে পার্শ্ববর্তী বনশ্রীর মেরাদিয়া হাটে। পশু ব্যাপারীদের আশঙ্কা, আফতাবনগর হাট না বসায় সকল কোরবানির পশু এসে ঢুকবে পার্শ্ববর্তী মেরাদিয়া হাটে। ক্রেতার তুলনায় যদি পশুর চাপ বেশি হয়, নিশ্চিত এই বাজারে শেষ সময়ে ব্যাপারীরা বিপদে পড়বে।

হাট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবারের পশুর হাট কিছুটা ব্যবসায়ী বান্ধব হবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আফতাবনগর হাট না বসায় গরুর চাপ যেমন বাড়বে, তেমনি ক্রেতাদের ভিড়ও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি হবে।

আড়াই লাখ টাকার গরুর দাম বলছে দেড় টাকা!

পাবনার সাথিয়া থেকে মেরাদিয়া হাটে গরু নিয়ে এসেছেন আব্দুর রহিম রনি। তিনি বলেন, প্রথম দফায় ১৫টি গরু এসেছে। বাজার ভালো দেখলে আরও আনাব। শুধু শুধু এতো গরু এনে কোনোরকম ঝুঁকি নেব না। এই বাজার এখনও জমেনি। হয়ত আগামী শুক্রবার থেকে বেচাকেনা শুরু হতে পারে। এখন কিছু মানুষ আসে, ছবি তুলে আর উল্টাপাল্টা দাম বলে চলে যায়। আমার আড়াই লাখ টাকার এক গরুর দাম বলছে দেড় লাখ টাকা। দেখা যাক সামনে কী হয়। আশা করছি ভালো কিছু হবে।

তিনি বলেন, আমার সর্বোচ্চ দামের গরু হচ্ছে ৩ লাখ ১০ হাজার, সেটার ওজন আছে ১০ মণের বেশি। আর অন্য যেগুলো আছে, সেগুলোর দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে। আমার সবগুলো গরুই অরিজিনাল দেশি। গ্রামের কৃষকদের ঘরে এগুলো বড় হয়েছে। ঘাস-খড়সহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়েছে।

ক্রেতাদের হাটে এসে গরু কেনার পরামর্শ দিয়ে এই বিক্রেতা আরও বলেন, অনেকেই অনলাইনে গরু কিনে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করেন। তাই ক্রেতাদের হাটে এসে নিজ চোখে দেখে যাচাই-বাছাই করে গরু কেনার আহ্বান জানাই। কারণ আমি যদি গরু কোরবানি দিই, সবার আগে আমাকে গরু দেখতে হবে। কোরবানির গরু কেমন ওজনের হবে, সেটা যাচাই করতে হবে। এরপর সাইজ দেখে টাকার অ্যামাউন্ট নিয়ে কথা বলতে হবে।

দুই দিনে বিক্রি হয়নি একটিও গরু, দাম নিয়ে অসন্তোষ

কুষ্টিয়ার মেহেরপুর থেকে মেরাদিয়া হাটে গতকাল ৯টি গরু নিয়ে এসেছেন মো. সিফাতুল ইসলাম। আরও ২৫টি গরু আসার পথে আছে।

বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানকার বাজারে আসলে কী হয় সেটা নিশ্চিত নয়। এখনো বাজার শুরু হয়নি। বাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ১২ তারিখ থেকে হাট বসবে। এরপর থেকেই আশা করি বেচাকেনা শুরু হবে। এখনও কিছু মানুষ এসে দামদর জিজ্ঞেস করছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত একটাও বিক্রি হয়নি।

সিফাতুল ইসলাম বলেন, দাম বললেই তো আর বিক্রি করা যায় না। আমার এখানে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ দামের গরু আছে। কিন্তু ১ লাখ ৮০ টাকার গরু যদি মাত্র ৮০-৯০ হাজার টাকা দাম বলে, তখন মেজাজ ধরে রাখা যায় না।

তিনি আরও বলেন, বাজার কর্তৃপক্ষ বলছে বাজার ভালো হবে। পাশাপাশি হাট বন্ধ তো, এ জন্য শেষ মুহূর্তে কী হয় না হয় অগ্রিম বলা যাচ্ছে না। যদি এখানে গরুর চাপ বেশি হয়, তাহলে জায়গা নিয়ে সমস্যা হবে। গরুর সংখ্যা বেশি হলে দামও কমে আসবে। আবার গরুর চাপ যত কম হবে দাম তত বেশি হবে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।

চাহিদা বেশি ছোট-মাঝারি সাইজের গরুর

চুয়াডাঙ্গা মহেশপুর থেকে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ২টা গরু নিয়ে এসেছি। দাম-দর চলছে, তবে আমরা যেমনটা আশাবাদী সে পর্যায়ে দাম এখনো যায়নি। আমার যে গরুটা আমি নিশ্চিত আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারি, সেটার দাম ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বলছে। আবার যেটা দেড় লাখ বিক্রি করতে পারি, সেটা এক লাখ টাকা বলছে। ক্রেতারা হয়ত চাচ্ছে হাটে গরু বাড়ুক তারপর আমরা কিনব। এই কারণে তারাও গরুর দাম বাড়াচ্ছে না। ঈদের আগ মুহূর্তে কী পরিস্থিতি হয় সেটা এখন বলতে পারব না।

কোন গরুর চাহিদা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বাজারে মাজারি এবং ছোট সাইজের গরুর চাহিদাই বেশি মনে হচ্ছে। অন্যান্য সময়ও দেখেছি দেড় থেকে দুই বা আড়াই লাখ টাকার মধ্যেই গরু সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। আবার রঙের দিক থেকে ক্রেতারা বেশি পছন্দ করেন লাল আর কালো গরু। হলুদ বা সাদা গরুতে তাদের খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায় না।

আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরু ১৩ জুন

ইজারাদাররা বলছেন, আনুষ্ঠানিক হাট শুরু ১৩ জুন, তবে পশু ব্যবসায়ীরা হাটে চলে এলে তো তারা ফেরত দিতে পারেন না। এজন্য তাদের ঢুকতে দেন। তাছাড়া নির্ধারিত দিনে পশু উঠিয়ে বিক্রি করা সম্ভব নয়। এজন্য কয়েকদিন আগে থেকে পশু উঠাতে হয়। আর এটা পশু ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করে। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে তারা এসে এ অবস্থা সৃষ্টি করেন।

মজনু মিয়া নামে এক ইজারাদার বলেন, হাট প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পশু নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। নিয়ম অনুযায়ী এখন পশু উঠানোর কথা নয়, কিন্তু তাদের তো ফেরতও পাঠানো যায় না। এজন্য কয়েক দিন আগে থেকে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। নিয়ম মেনে হাট পরিচালনার সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

হাটে সুযোগ-সুবিধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বছর ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকবে হাটে। গরু-ছাগলের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া পাইকারদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের টিম জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা করবে।

হাসিলের পরিমাণ সাইন বোর্ডে লেখা থাকবে, পীড়াপীড়ি করলে ব্যবস্থা

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, অস্থায়ী কুরবানি পশুর হাটের ইজারাদারদের নিয়ম মেনে হাট পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের ব্যত্যয় হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকল অনিয়ম রুখতে পশুর হাটগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা সার্বিক বিষয় মনিটরিং করবেন।

তিনি বলেন, প্রতিটি হাটে পশু চিকিৎসক থাকবেন। পশু কোনো নির্ধারিত হাটে নেওয়ার জন্য জোর করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসিলের পরিমাণ সাইন বোর্ডে লেখা থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কোরবানির পশুবাহী যানবাহন থামানো যাবে না। পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প রাখা হবে, জাল নোট শনাক্ত করার মেশিন ও এটিএম বুথও থাকবে।

টিআই/এসকেডি