অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, প্রতিবছরই নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাজেট আসবে, কোথাও বরাদ্দ বাড়বে আবার কোথাও কমবে। কিন্তু বাজেটের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বাস্তবায়ন কীভাবে হচ্ছে ও কোথায় হচ্ছে সেটা।

তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন বাজেটের প্রথম তিন মাসে বাস্তবায়ন হয় ৩ শতাংশ, পরের তিন মাসে হয় ৯ শতাংশ এবং শেষ নয় মাসে সেটা হয়ে যায় ২৭/২৮ শতাংশ। তারপর থাকে তিন মাস, সেই তিন মাসে বাজেটের আকার কিছুটা কমানো হয়। বাজেট বাস্তবায়ন হয়ে যায় ৮০ শতাংশ। এটার ম্যাজিকটা কি আমি জানি না। ওই সময় বাজেটের টাকা ব্যয় করতে হবে তাই করা হয় এবং তাড়াহুড়া করে কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। আরেকটা দিক হচ্ছে এই রকম ব্যয় করার হিড়িক যখন পড়ে তখন নয়-ছয় করার সুযোগ হয়, অনেকের পকেট ভারী হয়।

সোমবার (১০ জুন) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওর (ডর্প) ও হেলভেটাস বাংলাদেশ আয়োজিত জলবায়ু, পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক বাজেট প্রতিক্রিয়া শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা’র সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডর্প চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্র্র্যাটেজিক স্টাডিজ- বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির। ইআরএফ কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় সমাপনী বক্তব্য দেন ডর্পের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এএইচএম নোমান।

খলীকুজ্জমান বলেন, অনেকে বলেন এই খাতে বরাদ্দ বাড়েনি ওই খাতে কম হয়েছে, কিন্তু আমি বলি বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে কী হবে যদি খরচ না হয়। তারপর খরচ কোথায় হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়, কতটা মানসম্পন্ন হচ্ছে সেটাও আরেকটা বিষয়।

তিনি বলেন, আমাদের নীতি তৈরি করায় কোন সমস্যা নেই, সার্বিক দিক নির্দেশনায় কোনো ঘাটতি নেই। টেকসই, উন্নয়ন ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের কথা বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছেন তেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, সমস্যা হয় বাস্তবায়নে।

‌‘এবার যে বাজেটে আমাদের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হলো ৬.৫ শতাংশ ও প্রবৃদ্ধি ৬.৭৫ শতাংশ। এটা কীভাবে হবে? বাজেটেও এবিষয়ে বাজেট বক্তব্যে কিছু বলাও নেই। চলতি বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ এটা সারা বছরে কমেনি বরং বেড়েছে, বাজেট দেওয়ার পর আরও বেড়েছে, এখন ১০ শতাংশের কাছাকাছি। অথচ মূল্যস্ফীতি শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতিও আমাদের চেয়ে কম। তাদের যেটুকু বেড়েছিল তারা তা নিয়ন্ত্রণ করেছে।’

খলীকুজ্জমান বলেন, যে দুয়েকটি আর্থিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল সেগুলো কোনো কাজ করছে না। অন্যদেশে এসব পদক্ষেপ কাজ করে আমাদের দেশে করে না কেন? কারণ আপনারা যাকে বলেন সিন্ডিকেট আমি বলি দুষ্টচক্র। এই দুষ্ট চক্রগুলোতে যারা আছে তারা সঠিক পদক্ষেপগুলোকেও বাস্তবায়ন করতে দেয় না। আমাদের দেশে দুষ্টচক্র প্রায় সব জায়গাতেই রয়েছে, দুষ্টচক্র আছে আলুর বাজারে, পান সুপারির বাজারে, ডলারের বাজারে আছে। বিদেশের শ্রমবাজারেও দুষ্টচক্র রয়েছে, যার প্রমাণ কয়েকদিন আগেই দেখা গেল।

‘দুষ্টচক্রগুলো যেখানে আছে সেখানে যত ভালো পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন যতক্ষণ পর্যন্ত দুষ্টচক্রের লম্বা হাতগুলো হ্রাস করা না হয় ততক্ষণ তা বাস্তবায়ন হবে না। আমরা অগ্রগতি অনেক করেছি আর এই অগ্রগতিগুলো ধরে রাখতে ও তরান্বিত করতে হলে এই দুষ্ট চক্রগুলোকে দমন করতে হবে। আমাদের যদি এগিয়ে যেতে হয় তা হলে দুর্নীতির ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীল হতে হবে। এবার দুজন রাঘব বোয়ালকে বিচারের মুখুমোখি করার প্রক্রিয়া চলছে। আমি আশা করবো শেষ পর্যন্ত বিচার হবে।’

তিনি বলেন, আইএমএফ বলছে ব্যাংক খাতে সুশাসন বাড়াতে হবে, কর জিডিপি বাড়াতে হবে, বিদ্যুতের দাম ও গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। আইএমএফ’র যে শর্তগুলো মানলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সুসংগঠিত হতে পারতো সেগুলো বাস্তবায়ন হলো না। এর মধ্যে কোনটা বাড়ছে যেটা সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে সেটা হলো বিদ্যুতের দাম।

এসআই/এমএ