প্রস্তাবিত বাজেটে চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে সরকারের অব্যাহত নীতি সহায়তার অংশ হিসেবে অ্যাম্বুলেন্স হ্রাসকৃত শুল্কে আমদানির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে অ্যাম্বুলেন্সের দাম কমবে।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত এ বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে এ বাজেট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়, পরে ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

অ্যাম্বুলেন্স আমদানির বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, এর ন্যূনতম দৈর্ঘ্য নির্ধারিত না থাকায় শুল্কায়নে জটিলতা দেখা যায়। এ জটিলতা নিরসনে আমদানির ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সের প্যাসেঞ্জার কেবিনের ন্যূনতম দৈর্ঘ্য ৯ ফুট নিরূপণ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এইচ.এস কোডের বর্ণনা পরিবর্তন করার সুপারিশ করা হয়েছে বাজেটে।

এ ছাড়া বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিসে ব্যবহৃত হয় এমন দুটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ হচ্ছে ডায়ালাইসিস ফিল্টার ও ডায়ালাইসিস সার্কিট। পণ্য দুটির আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১ শতাংশ নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

অপরদিকে, স্পাইনেল নিডেল পণ্যটির সুনির্দিষ্ট কোনো এইচ.এস কোড না থাকায় আমদানি পর্যায়ে শুল্কায়নে জটিলতা দেখা যায়। তাই পণ্যটির নতুন এইচ.এস কোড সৃজন করে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এবার বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি কম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তবে, অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে দুই লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যার ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। করব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

দেশের ১৮তম অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবারই প্রথম বাজেট পেশ করেছেন। এটি দেশের ৫৩তম বাজেট।

এমএম/এসএসএইচ