দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদির গুরুত্ব বিবেচনায় যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি পাস হলে গত অর্থবছরের তুলনায় এবার যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন বরাদ্দ কমবো ৪ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তার আগে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয় এবং পরে ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।

এটা অর্থমন্ত্রী আবুল হাসানের প্রথম ও স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেট। নানা সংকটের মধ্যেও নতুন অর্থমন্ত্রী স্বপ্ন দেখছেন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে। এজন্য এবারের বাজেট প্রতিপাদ্য ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’।

বাজেট প্রস্তাব করে সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদির গুরুত্ব বিবেচনায় যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করছি। বর্তমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে ৮৫ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আধুনিক ও টেকসই মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহাসড়কে ১ হাজার ৪৩৯টি সেতু নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে এবং ৮৫১.৬২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২০৪১ সাল নাগাদ ১২টি এক্সপ্রেসওয়ে এবং দশটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে ৬টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু করা হয়েছে, যা দ্রুতগামী, দূষণমুক্ত, সময়সাশ্রয়ী, অত্যাধুনিক নগর পরিবহন হিসেবে নারী-পুরুষ সবার কাছে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চল বিশেষ করে উত্তর-মধ্যাঞ্চলের সংযোগ সৃষ্টি হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যান্র চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে একাধিক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল দ্রুততম সময়ে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে উন্নত ও দীর্ঘ করা হয়েছে।

রেলপথ উন্নয়ন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, খুলনা থেকে মোংলা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত ৬৪.৭৫ কিমি. ব্রডগেজ রেলওয়ে লাইন নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করা হয়েছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার নতুন রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় ওই সেকশনটি ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে এবং উপ-আঞ্চলিক করিডোরের একটি বড় অংশ হিসেবে কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রায় সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে ১০.৫ মিটার ড্রাফট বিশিষ্ট ৪০-৫০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ এ বন্দরে চলাচল করছে। এছাড়া, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বিশাল অঙ্কের এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে। যদিও গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করেছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটের এ আকার কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।

এমএইচএন/এসএম