বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের মতো আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও সরকার বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ করার পরিকল্পনা ঠিক করেছে। যা ঘাটতির প্রায় ৫৪ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ১৭ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত এ বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে এ বাজেট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়, পরে ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

এটি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসানের প্রথম ও স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেট। নানা সংকটের মধ্যেও নতুন অর্থমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন। এজন্য এবারের বাজেটের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে অনুদান ব্যতীত ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪.৬ শতাংশ। এ হার গত বাজেটে ছিল ৫.২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে নির্বাহ করার জন্য প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।

বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল হিসেবে ব্যাংক খাতকে বেছে নিয়েছে সরকার। তাই এবার ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এটি বাড়িয়ে এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা ঠিক করা হয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যদিও গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটের এ আকার কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।

এসআই/এসএসএইচ