১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সার্বভৌম বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। ওই বছর অর্থাৎ ১৯৭১ সালে মাত্র ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করে লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ। এর পরের বছর ১৯৭২ সালে প্রথম ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। সেই বাংলাদেশ এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

দেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ছোট। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার ৫৩ বছরের ব্যবধানে হাজার গুণের বেশি (১০১৪ গুণ) বড় বাজেট নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট উপস্থাপন।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদন হবে এবং পরে ওই প্রস্তাবে সই করবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। পরে সংসদে পাস হয়ে ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।

নানা সংকটের মধ্যেও নতুন অর্থমন্ত্রী স্বপ্ন দেখছেন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। এজন্য এবারের অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য ধরা হচ্ছে  ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদ। বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে (১৯৭২-৭৩) অর্থবছরে ওই বাজেট দিয়েছিলেন তাজউদ্দীন। পরের দুটি বাজেটও দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন। এর আগে মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই দৈনন্দিন ও অপরিহার্য ব্যয় নির্বাহে একটি বাজেট পেশ করেছিল। সব মিলিয়ে ১৩ জন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বাজেট দিয়েছেন।

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ৫৩তম যে বাজেট দেবেন তার আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার  কোটি টাকা। এ হিসাবে স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেটের চেয়ে আসন্ন নতুন বাজেটের আকার বেড়ে দাঁড়াবে ১০১৪ গুণ বেশি।

এর আগে টানা পাঁচবার বাজেট দেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার আগে টানা ১০ বার বাজেট দিয়ে রেকর্ড করেছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরও আগে বাংলাদেশের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া টানা ছয়টি বাজেট দেন। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ১০ বাজেট ছাড়াও এরশাদ সরকারের সময় (১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর) দুটি বাজেট দিয়েছিলেন। এ হিসেবে মুহিতের উপস্থাপন করা বাজেটের সংখ্যা ১২টি। এছাড়া প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানেরও ১২টি বাজেট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

স্বাধীনতার পর যত বাজেট 

১৯৭২-৭৩ তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকা

১৯৭৩-৭৪ তাজউদ্দীন আহমদ ৯৯৫ কোটি টাকা

১৯৭৪-৭৫ তাজউদ্দীন আহমদ ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা

১৯৭৫-৭৬ ড. আজিজুর রহমান মল্লিক (এ আর মল্লিক) ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা

১৯৭৬-৭৭ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা

১৯৭৭-৭৮ লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান ২১৮৪ কোটি টাকা

১৯৭৮-৭৯ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা

১৯৭৯-৮০ ড. এম এন হুদা ৩৩১৭ কোটি টাকা

১৯৮০-৮১ এম সাইফুর রহমান ৪১০৮ কোটি টাকা

১৯৮১-৮২ এম সাইফুর রহমান ৪৬৭৭ কোটি টাকা

১৯৮২-৮৩ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪৭৩৮ কোটি টাকা

১৯৮৩-৮৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫৮৯৬ কোটি টাকা

১৯৮৪-৮৫ এম সাইদুজ্জামান ৬৬৯৯ কোটি টাকা

১৯৮৫-৮৬ এম সাইদুজ্জামান ৭১৩৮ কোটি টাকা

১৯৮৬-৮৭ এম সাইদুজ্জামান ৮৫০৪ কোটি টাকা

১৯৮৭-৮৮ এম সাইদুজ্জামান ৮৫২৭ কোটি টাকা

১৯৮৮-৮৯ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১০৫৬৫ কোটি টাকা

১৯৮৯-৯০ ড. ওয়াহিদুল হক ১২৭০৩ কোটি টাকা

১৯৯০-৯১ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১২৯৬০ কোটি টাকা

১৯৯১-৯২ এম সাইফুর রহমান ১৫৫৮৪ কোটি টাকা

১৯৯২-৯৩ এম সাইফুর রহমান ১৭৬০৭ কোটি টাকা

১৯৯৩-৯৪ এম সাইফুর রহমান ১৯০৫০ কোটি টাকা

১৯৯৪-৯৫ এম সাইফুর রহমান ২০৯৪৮ কোটি টাকা

১৯৯৫-৯৬ এম সাইফুর রহমান ২৩১৭০ কোটি টাকা

১৯৯৬-৯৭  শাহ এ এম এস কিবরিয়া ২৪৬০৩ কোটি টাকা

১৯৯৭-৯৮ শাহ এ এম এস কিবরিয়া ২৭৭৮৬ কোটি টাকা

১৯৯৮-৯৯ শাহ এ এম এস কিবরিয়া ২৯৫৩৭ কোটি টাকা

১৯৯৯-০০ শাহ এ এম এস কিবরিয়া ৩৪২৫২ কোটি টাকা

২০০০-০১ শাহ এ এম এস কিবরিয়া ৩৮৫২৪ কোটি টাকা

২০০১-০২ শাহ এ এম এস কিবরিয়া ৪২৩০৬ কোটি টাকা

২০০২-০৩ এম সাইফুর রহমান ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা

২০০৩-০৪ এম সাইফুর রহমান ৫১৯৮০ কোটি টাকা

২০০৪-০৫ এম সাইফুর রহমান ৫৭২৪৮ কোটি টাকা

২০০৫-০৬ এম সাইফুর রহমান ৬১০৫৮ কোটি টাকা

২০০৬-০৭ এম সাইফুর রহমান ৬৯৭৪০ কোটি টাকা

২০০৭-০৮ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

২০০৮-০৯  এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা

২০০৯-১০ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা

২০১০-১১ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৩২,১৭০ কোটি টাকা

২০১১-১২ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৬৫,০০০ কোটি টাকা

২০১২-১৩ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা।

২০১৩-১৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা

২০১৪-১৫ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা

২০১৫-১৬ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা

২০১৬-১৭ আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা

২০১৭-১৮ আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকা

২০১৮-১৯ আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

২০২০-২১ আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

২০২১-২২ আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

২০২৩-২৪ আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বিশাল বড় এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল হিসাবে ব্যাংক খাত বেছে নিয়েছে সরকার। ফলে এবারও ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার।

আসন্ন বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটের এ আকার কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।

এসআই/এসকেডি