চিরুনি অভিযান চায় বাজুস
চোরাচালান নির্ভর দেশের ১১ হাজার কোটি টাকার হীরার বাজার
দেশের হীরার বাজার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটাই চোরাচালান নির্ভর। সোনা চোরাচালানের খবর পাওয়া গেলেও হীরা চোরাচালানের খবর পাওয়া যায় না। এসব চোরাচালানের কারবারিরা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সংকটে পড়ছে বৈধ ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে চোরাকারবারিদের ধরতে চিরুনি অভিযানের দাবি জানিয়েছেন সোনা ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (৩ জুন) রাজধানীতে সোনা ও হীরা চোরাচালান বন্ধে করণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এই দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুস কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি মো. রিপনুল হাসান, সহসভাপতি মাসুদুর রহমান, কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, ইকবাল উদ্দিন, আলী হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
অবৈধ পথে হীরা আমদানির বড় কারণ শুল্ক ফাঁকি হচ্ছে জানিয়ে বাজুস নেতা রিপনুল হাসান জানান, হীরা আমদানিতে শুল্ককর অনেক বেশি। বন্ড সুবিধা ছাড়া অমসৃণ হীরা আমদানিতে কর ৮৯ শতাংশ। মসৃণ হীরা আমদানিতে কর প্রায় ১৫১ শতাংশ। এই শুল্ককর ফাঁকি দিতেই মূলত অবৈধ পথে বিপুল পরিমাণে হীরা আসছে। দেশের হীরার বাজার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এই হীরার বাজার পুরোটাই চোরাচালান নির্ভর থাকার কারণে গত ১৯ বছরে এই মূল্যবান রত্ন আমদানিতে সরকার মাত্র ১২ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। যা খুবই সামান্য।
বাজুসের হিসেবে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সীমান্ত অবস্থিত। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা এই ৬ জেলা সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে। ভারতে পাচার হওয়া সোনার বড় একটি অংশ এ সব জেলার সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়। বাজুস বলছে, প্রতিদিন সারাদেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে কমপক্ষে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলংকার, সোনার বার ও হীরার অলংকার চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসছে। যা বছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৮০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সোনা ও ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার হীরা অবৈধভাবে দেশে আসছে। এই পুরো টাকাটাই হুন্ডির মাধ্যমে সোনা ও হীরা চোরাকারবারিরা বিদেশে পাচার করছে। ফলে সরকার রেমিট্যান্স হারাচ্ছে এবং সোনা ও হীরা চোরাকারবারিরা তাদের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করছে।
ডলারের মাত্রাতিরিক্ত দাম ও সংকট এবং বেপরোয়া চোরাচালানের ফলে বহুমুখী সংকটে পড়েছে দেশের জুয়েলারি শিল্প জানিয়ে রিপনুল হাসান বলেন, দেশে খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম এখন ১২০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোনার বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিয়েছে চোরাকারবারিদের দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতিনিয়ত স্থানীয় পোদ্দার বা বুলিয়ন বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হচ্ছে। পোদ্দারদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সোনার পাইকারি বাজার। পোদ্দারদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেটের সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। মূলত এই চোরাকারবারিদের একাধিক সিন্ডিকেট বিদেশে সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত। সোনার বাজারে শৃঙ্খলা আনতে কঠোর অভিযানের বিকল্প নেই। তাই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে আলোচিত জেলাগুলোতে চিরুনি অভিযানের দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে সোনা ও হীরা চোরাচালান রোধে সরকারের কাছে বাজুস বেশকিছু সুপারিশ করে। এগুলো হলো- সোনা ও হীরা চোরাচালানে জড়িতদের ধরতে আইন-প্রয়োগকারি সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযান করা; সোনা ও হীরা চোরাচালান প্রতিরোধে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করা; ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে সোনার বার আনা বন্ধ করা; ট্যাক্স ফ্রি সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করা; একই ধরনের অলংকার দুটির বেশি না আনা; একই সঙ্গে একজন যাত্রীকে বছরে শুধুমাত্র একবার ব্যাগেজ রুলের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে এমন বিধান করা; ব্যাগেজ রুলের আওতায় সোনার বার ও অলংকার আনার সুবিধা অপব্যবহারের কারণে ডলার সংকট ও চোরাচালানে কী প্রভাব পড়ছে, তা জানতে বাজুসকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সমীক্ষা পরিচালনার প্রস্তাব করে বাজুস।
এসআই/এসএম