‘খরচ কমাতে আলুই বেশি খেতাম, এখন খাব কী?’
‘বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান’— এ রকম একটি স্লোগান এক সময় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। কেননা তখন চাল-ডাল ও অন্যান্য সব সবজির তুলনায় আলুর দামটাই কম ছিল। তবে, সেই প্রেক্ষাপট এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে। বাজারে যে আলুর দাম থাকতো সবসময় ২০ থেকে ২৫ টাকা, সেই আলুই এখন সবকিছু ছাপিয়ে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার (৩১ মে) রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে আলুর দামের এই চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
গত ২৭ ফেব্রুয়ারিতেও ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ৩০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হয়েছে। এরপর ঈদুল ফিতরের পর থেকেই বাড়তে শুরু করে দাম। তিন মাসের ব্যবধানে বর্তমানে সাধারণ ডায়মন্ড আলুর দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকা। অলি-গলির দোকানপাটে কোথাও আবার এই আলুই বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজিতে। এছাড়া, লাল গোল আলু ৭০ টাকা এবং জাম আলু খ্যাত লাল ও লম্বা আলুর কেজি ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, কারসাজি করে বাজারে আলুর সংকট দেখিয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বিপরীতে খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে আলুর সংকট থাকায় নতুন করে দাম বেড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশে আলুর বাড়তি দামের কারণে আমদানিও কমে গেছে।
আরও পড়ুন
বাজার করতে আসা মোহাম্মদ আল আমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। যে কারণে মাসের খাবার খরচ বেড়েছে প্রায় অর্ধেক। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। দুইটি টিউশনি করিয়ে আগে যা পেতাম, এখনও তাই পাই। কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাবার উপায় নেই।
তিনি বলেন, খরচ কমানোর জন্য আগে অন্যান্য সবজির চেয়ে আলুটাই বেশি খেতাম। এখন দেখি অন্য সবকিছুর চেয়ে আলুর দামই বেশি, তাহলে আমরা এখন খাব কী?
বাজারে আলুর ঊর্ধ্বমুখী দাম প্রসঙ্গে মো. কবির হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, বেশি দামে আলু কিনে তো আর কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। পাইকারি বাজারেই আলুর দাম বেশি। হয়তো এই সিজনে আর আলুর দাম কমবে না। কমার কোনো লক্ষণও নেই।
তাহলে কি দাম বাড়তেই থাকবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে নতুন আলু না আসা পর্যন্ত হয়ত দামটা আরেকটু বাড়তে পারে। তবে, আমদানি বাড়লে আবার দাম কমেও আসতে পারে।
বাজারে শুধু আলুর দামই নয়, সপ্তাহ ব্যবধানে এক লাফে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। গত সপ্তাহে যেখানে দাম ছিল ১৫০ টাকা কেজি, বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকারও বেশি। এছাড়া, বাজারে পেঁপে ৫০-৬০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা ও চিচিঙ্গা ৪০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা ও কাঁকরোল ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, রসুন ২৪০ টাকায় ও আদা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। বাজারে কেবল তুলনামূলক কমদামে বিক্রি হচ্ছে ঢেড়স ৩০ টাকা ও বেগুন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে।
জসিম উদ্দিন নামক এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমাদের স্বল্প বেতনে প্রতিদিন মাছ বা মাংস খাওয়া যায় না। কিন্তু সবজির দামও যদি এমন বাড়তি যায়, তাহলে এটা খাওয়াও কমিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজিতে ভরপুর। কোনও সংকট নেই। তারপরও ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। আমরা আসলে যাব কোথায়? এভাবে একটা দেশ চলতে পারে?
সবজির দাম প্রসঙ্গে বিক্রেতা সায়েদুল ইসলাম বলেন, কিছু জিনিসের দাম শুক্রবার এলে এমনিতেই বেড়ে যায়। যেমন, শসা অন্যান্য দিনে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করি, কিন্তু শুক্রবারে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি করি। শুক্রবার গাজরের চাহিদাও বাড়ে, যে কারণে দামটাও বাড়ে।
অন্যান্য সবজির দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার দামটা একটু বাড়তি। গরম কমলে সামনে দাম কিছুটা কমতে পারে।
টিআই/কেএ