এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, ‘প্রতিবার যখন বাজেট টার্গেট দেওয়া হয়, তখন এনবিআরের অসহায়ত্বটা প্রকাশ পায়। সক্ষমতা হিসাব না করে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে টার্গেট দেওয়া হয়, ওই টার্গেটটা পূরণ করতে হবে। যে কারণে অনেক ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ থাকে না।’

রোববার (১৯ মে) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ডিজিটালাইজেশন অব দ্য বাংলাদেশ ট্যাক্স সিস্টেম : দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার ফর হায়ার রিসোর্স মবিলাইজেশন’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। এতে আরও বক্তব্য অর্থপ্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘প্রতিবার যখন বাজেট টার্গেট দেওয়া হয়, তখন এনবিআরের অসহায়ত্বটা প্রকাশ পায়। টার্গেট একটি দিয়ে দেওয়া হলো, সক্ষমতা আসলে কতটুকু আছে এবং টার্গেট অলৌকিক। সক্ষমতা হিসাব না করে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে টার্গেট দেওয়া হয় এবং এই টার্গেটটা পূরণ করতে হবে।’ 

তিনি বলেন, এই টার্গেটের সঙ্গে মিল রেখে অন্যান্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ইনোভেটিভ কোনো চিন্তা, রিফর্মের কোনো চিন্তা-কোনো কিছু করার সুযোগ থাকে না। শুধু ওই টার্গেটের পেছনে ছুটতে হয়। আবার ওই টার্গেট ঠিক করা হয় আগের বছরের টার্গেটের সঙ্গে পার্সেন্টেজ ধরে, রিভাইজড টার্গেট বিবেচনায় নেওয়া হয় না। টার্গেটের বোঝা মাথায় থাকার কারণে অনেক ইনোভেটিভ আইডিয়া ও অনেক কিছু চিন্তা করার সুযোগ থাকে না।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যারা কর দেয় না, দেশ থেকে টাকা পাচার করে, এরা অনেক শক্তিশালী, তারা রাজনৈতিক, ব্যবসা ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। এটি একটি আর্থিক রাজনৈতিক বিষয়। সেই রাজনৈতিক বিষয়ে প্রতিশ্রুতিগুলো যদি দৃশ্যমান না হয়, তাহলে অসহায় এনবিআর কর আহরণ করতে গিয়ে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এনবিআরকে সেই রাজনৈতিক সুরক্ষা দিতে হবে, তাদের প্রতি দৃশ্যমান সমর্থনকে প্রকাশ করতে হবে এবং সবাইকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। এটা এক ধরনের সামাজিক বিপ্লবেরই অংশ।’ 

দেবপ্রিয় আরও বলেন, করদাতাদের বিশ্বাসের ঘাটতি দূর করতে হবে। তারা হয়রানি ও দুর্নীতির ভয় পায়। ডিজিটালাইজেশন এসব ভীতি দূর করতে পারে। ডিজিটালাইজেশনের ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে আবার করদাতাদের সেবাও উন্নত হবে। শুধু এনবিআরকে ডিজিটালাইজ করলে হবে না, সবক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের সমন্বয়ন না ঘটলে তার ফল পাওয়া যাবে না। সরকারি ব্যয়ের গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে, তবেই জনগণ বেশি হারে কর দিতে আগ্রহ দেখাবে। উন্নত বিশ্বে জনগণের কর কীভাবে ব্যয় হয় তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে, ফলে ওইসব দেশে কর আহরণের পরিমাণও বেশি হয়ে থাকে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলেও আসন্ন বাজেট বাস্তবায়নে এক টাকাও বিদেশ থেকে ঋণ করতে হতো না। রাজস্ব আহরণে কর জিডিপি অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এখনও সর্বনিম্ন, এমনকি শ্রীলঙ্কার থেকেও কম। এডিপি বাস্তবায়নের পুরোটাই বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। দেশে কর জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশের মতো, আসলে সাধারণ মানুষ কি এই ৯ শতাংশ কর দেয়, আরও বেশি দেয়, সেটি লিকেজ থাকে।

প্রবন্ধে বলা হয়, রাজস্ব আহরণের পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা, বর্তমানে তা মাত্র ৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা (৪৮ বিলিয়ন ডলার)। অর্থবছর ২৩-এ রাজস্ব আহরণ ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার, ২৪ অর্থবছরে ৪৮ বিলিয়ন ডলার; পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটালাইজড হলে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১৬৭ বিলিয়ন ডলারে (১৯ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বা প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা)। এছাড়া শুধু সব ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং নিশ্চিত করা হলে পরবর্তী বছরেই বাড়তি রাজস্ব আসবে ২৪.১ বিলিয়ন ডলার, পরবর্তী অর্থাৎ ২য় বছরে ২৬.৯ বিলিয়ন ডলার ও চতুর্থ বছরে ৩২.৬ বিলিয়ন ডলার। করের সবক্ষেত্রে যদি ২৫ শতাংশ অনলাইন করা যায় তবে পরবর্তী বছরেই বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে ৫.৮ বিলিয়ন ডলার ও চতুর্থ বছরে গিয়ে তা দাঁড়াবে ৭.৮ বিলিয়ন ডলারে।

আরএম/জেডএস