সংকটকালে ধনীদের কাছ থেকে সম্পদ সংগ্রহে জোর সিপিডির
করোনাভাইরাস মহামারি সংকটে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ধনীদের কাছ থেকে করহার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি দেশের সম্পদশালীদের কাছ সম্পদ সংগ্রহ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের মাঝে সুষম বণ্টন না করা যায়, তাহলে তা হবে কর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রস্তাবনায় উঠে এসেছে এমন বক্তব্য।
বিজ্ঞাপন
সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম খান সুপারিশমালা উপস্থাপনায় বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে চারটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম বিষয়টি হলো, আগামী বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করব, তা যেন অবাস্তব না হয়। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কতটুকু সম্পদ কর ও কর বহির্ভূত উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারব তা নির্ধারণ করা। এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকলে বাজেটে অর্থসংস্থান করা সহজ হবে। অন্যদিকে কিভাবে ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে সহজে উত্তরণ মিলবে, তার যেন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, কোভিডকালে কোনো কোনো সেক্টরে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কর সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। করের সুবিধা একবার দিয়ে ফেললাম দেখে সারাজীবন দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আমাদের প্রচুর কর আদায় হওয়ার কথা থাকলেও আমরা পাই না। এ জায়গায় আমাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। দুর্নীতি রোধ করে এ জায়গায় মনোযোগ দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ধনীদের কাছ থেকে কর হার বৃদ্ধির প্রস্তাবনায় তৌফিক বলেন, গত অর্থবছরের কর কাঠামোতে করের সর্বোচ্চ হার যে ৩০ শতাংশ ছিল, সেখান থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আমরা মনে করি বর্তমান পরিস্থিতি ও সামষ্টিক অর্থনীতির বিবেচনায় এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমরা মনে করি ধনীদের ওপর করের হার আবার ৩০ শতাংশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা উচিত। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ধনীদের কাছ থেকে কর আহরণ হার বাড়িয়েছে। বর্তমান সংকটকালে আমরা যদি সম্পদশালীদের কাছ সম্পদ সংগ্রহ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের মাঝে সুষম বণ্টন করতে না পারি, তাহলে তা কর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না। এছাড়া ব্যবসার ক্ষেত্রে কোভিডকালে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা যেন আগামীতে অব্যাহত থাকে।
সিপিডির প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, আগামী দুই-তিন বছর ভ্যাকসিনের জন্য বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহৃত সব ধরনের কাঁচামালে কর-শুল্ক ছাড় অব্যাহত রাখা উচিত। অন্যদিকে মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১ শতাংশ সারচার্জ প্রযোজ্য রয়েছে। শুধু মাত্র ৫ শতাংশ ভ্যাট রেখে কোভিডকালীন শিক্ষা ও ব্যবসার কথা বিবেচনায় নিয়ে তা প্রত্যাহার করা উচিত।
অন্যদিকে সিপিডি বলছে, স্বাস্থ্যখাতে ডাক্তার ও নার্সসহ ফ্রন্টলাইনার যোদ্ধা যারা আছেন, তাদের প্রণোদনার ৯০ শতাংশ এখনও পাননি। তাদেরকে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ তাদের চিকিৎসা সেবায় ধরে রাখা প্রয়োজন। ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানো যেতে পারে। কোভিড পরিস্থিতি না থাকলেও তাদের প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে কোভিডকালে আন্তর্জাতিক যেসব ফান্ড পাচ্ছি, তা যাতে সঠিক কাজে ব্যয় করতে পারি, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।
বাজেট ঘাটতি মেটানোর ক্ষেত্রে তৌফিক ইসলাম প্রস্তাবনায় বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকখাতে বড় অংকের তারল্য রয়েছে। আমরা অতিরিক্ত ব্যয়ের কথা বলছি, সেক্ষেত্রে বাজেট ঘাটতি যদি বেশি হয়, তাহলে ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে সংকোচ না করাটাই যুক্তিযুক্ত হবে। কারণ এখন বেসরকারি খাতে চাহিদা কম।
সামাজিক সুরক্ষার ওপর জোড় দিয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সরাসরি ক্যাশ সহায়তায় অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়ে। টাকার অংক ও সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানো প্রয়োজন। যারা সক্ষম তাদের ওপর বেশি জোড় দেওয়া উচিত। কর ফাঁকি বন্ধ করা প্রয়োজন। সেজন্য দরকার সংস্কার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আরও স্বাধীনতা দিয়ে কর আদায়ের সংস্কার প্রয়োজন। ৩৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্রের নিচে নেমে এসেছে। আমরা কোনোভাবেই মনে করি না, জিডিপি নিয়ে এতো মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আছে। পৃথিবীর অনেক দেশে জিডিপি ঋণাত্মক থাকা সত্ত্বেও তারা কোভিডকাল কত ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে সেটাই বড় কথা।
আরএম/আরএইচ