বছর শেষে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ : এডিবি
করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অর্জনে ভালো করবে। চলতি অর্থবছর শেষে এ হার ৬ শতাংশ হতে পারে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ওপর।
বুধবার (২৮ এপ্রিল) ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহে ঋণ ও অনুদান মিলে ৯৪ কোটি ডলার দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন সহায়তার বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আজ (বুধবার) প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের। এ সময় বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারি সামাল দিতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশে রফতানির গতি বাড়ায় প্রবৃদ্ধি বাড়বে। সেই সঙ্গে সরকারের দেওয়া প্রণোদনার সুফল মেলার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। আগামী অর্থবছরে আরও বৃদ্ধি পেয়ে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রেমিটেন্সের শক্তিশালী প্রবাহ অব্যাহত থাকায় ব্যক্তিখাতে ভোগব্যয় বাড়বে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগেও গতি আসবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ধীরে ধীরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ধারায় ফিরবে। অঞ্চল হিসেবে এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সবচেয়ে দ্রুত হবে। ২০২০ সালে যেখানে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ৬ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছিল, এবার তা ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়বে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ ভারত যদিও মহামারিতে নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারপরও এ বছর সেখানে ১১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর ভারতের অর্থনীতি ৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল।
প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে, যা গত অর্থবছর ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, চলতি অর্থবছর ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ওপর। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের চাপে এটি ৫ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ৮ শতাংশও হতে পারে। করোনার ভ্যাকসিন সংকট প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক কোম্পানির সক্ষমতা রয়েছে। তাই দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে জোর দিতে হবে।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুকি সোয়াদা বলেন, ভারত যে গতিতে টিকাদান চালিয়ে নিচ্ছে, তাতে অগাস্টের মধ্যে সেখানে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে ২০২২ সালেই হয়ত ভারত ‘হার্ড ইমিউনিটিতে’ পৌঁছে যাবে। এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর গতি যতটা হবে বলে আগে ভাবা হয়েছিল, এ বছর তার চেয়ে বেশি হবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বাড়লে এবং টিকাদানের গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ানো না গেলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ানো কঠিন হবে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। করোনা মহামারির বাস্তবতার কারণে পরে তা ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নিয়ে আসে সরকার। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসেবে অর্জন হয় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসেবে সেটি আরও কমবে বলে জানা গেছে।
এসআর/এইচকে