এক বিকেল না পেরোতেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ৫০ টাকা
ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে যেমন ৩ মাস আগে পেঁয়াজের দাম এক রাতেই কেজিতে বেড়েছিল ৬৫ টাকা, তেমনি বাংলাদেশের জন্য এক হাজার ৬৫০ টন পেঁয়াজ কিনছে ভারত— এমন খবরে এক বিকেল না পেরুতেই কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫০ টাকা।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মগবাজারের কাঁচাবাজারগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. আশরাফ ঢাকা পোস্টকে জানান, বাজারে দুই ধরনের পেঁয়াজ আছে এখন। এরমধ্যে একটি হচ্ছে পাবনার এবং অন্যটি হচ্ছে ফরিদপুরের। আজকের বাজারে পাবনার পেঁয়াজ প্রতি পাল্লার (৫ কেজি) দাম ২৮০ টাকা এবং ফরিদপুরের পেঁয়াজের দাম ২৬০ টাকা। গত সপ্তাহের মঙ্গলবারে পাবনার পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ৪০০ টাকা এবং ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৩৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আরেক ব্যবসায়ী জলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল থেকেই পেঁয়াজের দাম কমেছে। আগে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ৭২ থেকে ৮০ টাকা। এখন পেঁয়াজের দাম ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। দাম কেন বাড়ল বা কমলো, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমরা কিনে এনে এখানে মাত্র ২/৩ টাকা লাভে বিক্রি করি।
আরও পড়ুন
ভারতের পেঁয়াজ দেশে আসলে দাম আরো কমবে কী না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতের পেঁয়াজ আসবে কী না তারই তো কোনো ঠিক নেই। আসলেও দাম এমনই থাকবে।
এদিকে মগবাজারের চারুলতা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, যে পেঁয়াজের দাম একদিন আগেও ১১০ টাকা ছিল, সেটি কমে হয়েছে মাত্র ৬০ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, দেশের ব্যবসায়ীদের মন বোঝা বড় দায়।
কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল বিকাল থেকে পেঁয়াজের দাম কমেছে। এখন পাবনার পেঁয়াজ ১১০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৬০ টাকা এবং ফরিদপুরের পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৫০ টাকা। দাম বাড়া-কমার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো কারিশমা নেই। আমরা যেমন দামে কিনি, তেমন দামেই বিক্রি করি।
ওই দোকানের ক্রেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, গত ২ দিন আগে এই দোকান থেকে এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছি ১১০ টাকা দিয়ে। আজও এক কেজিই নিতে এসেছিলাম। কিন্তু এক কেজির দামে আজ ২ কেজি কিনতে পারলাম। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের মন বোঝা বড় দায়। কী এমন হলো যে দাম অর্ধেকে নেমে এলো। তারা কিন্তু সীমিত লাভ করলে সারা বছরই মানুষ একটা লেভেলে বাজার করতে পারে। কিন্তু সেটি তারা করে না। কোনও মাসে একই বাজার হয় ১০ হাজার টাকা আবার কোনও মাসে ওই একই বাজার হয় ১৫-১৬ হাজার টাকায়।
গতকাল বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য দেশের কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টন পেঁয়াজ কিনছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রপ্তানি সংস্থা ন্যাশনাল কো অপারেটিভ এক্সপোর্ট লিমিটেড (এনসিইএল), এমন খবর প্রকাশ পায়। খবরে বলা হয়, প্রতি কেজি ২৯ রুপি (বাংলাদেশি টাকায় ৩৮ টাকা ৪০ পয়সা) দরে এই পেঁয়াজ পাঠানো হবে বাংলাদেশে।
নিজেদের অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজ রপ্তানিতে সাড়ে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ডিসেম্বরের শুরুতে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল— ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে।
তবে কূটনৈতিক পর্যায়ে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার পেঁয়াজ পাঠানোর অনুরোধের পর ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোতে মোট ৬৪ হাজার ৪০০ টন পেঁয়াজ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এই ৬৪ হাজার ৪০০ টন পেঁয়াজের মধ্যে বাংলাদেশের ভাগে পড়েছে ১ হাজার ৬৫০ টন।
এমএইচএন/পিএইচ