এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, ক্রেতাদের ক্ষোভ
হঠাৎ লাফিয়ে বাড়া পেঁয়াজের দাম এখনো চড়া। গেল ১০ দিন ধরে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পেঁয়াজের কেজি ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। মাসের শেষে হঠাৎ ১০০ টাকায় চলে যায় পেঁয়াজের দাম। আর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ শেষে দাম আবার লাফিয়ে বাড়ে। এখনো বাজারে পেঁয়াজে সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন করে বাজারে পেঁয়াজ ওঠার আগ পর্যন্ত দাম কমবে না। অন্যদিকে চড়া দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। তবে যে পেঁয়াজগুলো দেখতে একটু ভালো সেগুলো কোথাও কোথাও প্রতি কেজি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিক্রেতারা বলছেন, প্রায় ১০ দিন হলো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ শেষ হতে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম, সে কারণেই বাড়তি দাম যাচ্ছে পেঁয়াজের। প্রধান জাতের পেঁয়াজ অর্থাৎ হালিকাটা পেঁয়াজ বাজারে পর্যাপ্ত এলেই কমে যাবে পেঁয়াজের দাম।
রাজধানীর মহাখালীর পেঁয়াজ বিক্রেতা রামেন্দ্র নাথ বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। বাড্ডার বাজার থেকে সকালে পেঁয়াজে এনেছি, সেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়েছে ১১০ টাকার মতো। এরপর পরিবহন খরচ, লেবার খরচ আছে। সবমিলিয়ে সেই পেঁয়াজ খুচরায় ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। আসলে বাজার বাড়তি হলে আমাদের কিছু করার থাকে না, বাড়তি দামে কিনে এনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হয়। আজ ১০ দিন ধরে খুচরা বাজারে ১২০/১৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এখনই দাম একেবারে কমবে না। অন্তত ১৫ দিন লাগবে পেঁয়াজের দাম কমে আসতে। যখন হালিকাটা পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে আসবে, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে তখন পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
পাবনা থেকে পাইকারি কিনে এনে রাজধানীতে খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি করেন আজগর আলী নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, পাবনা থেকেই অনেক বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। আগে যে পেঁয়াজ ৭০ টাকায় পাইকারিতে কিনেছি, এখন সেটা ১০০ টাকার ওপরে কেনা পড়ছে। পরিবহন খরচও বেশি, সবমিলিয়ে ঢাকায় খুচরা প্রতি কেজি বিক্রি করছি ১২০ টাকায়। আর পাইকারি বাজারেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ছিল সেটা এখন শেষের দিকে, তাই বাজারে সরবরাহ একেবারে কমে গেছে। নতুন পেঁয়াজ উঠবে কিছুদিনের মধ্যে, তখন পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। আর নতুন হালিকাটা পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত ক্রেতাদের বেশি দামেই পেঁয়াজ কিনতে হবে।
আরও পড়ুন
রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকার একটি মুদি দোকানে সবসময় পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও আজ নেই। এর কারণ জানতে চাইলে দোকানি খোরশেদ আলম বলেন, আমার কাছে এক ক্যারেট পেঁয়াজ ছিল, তা গতকাল (রোববার) শেষ হয়ে গেছে। এখন পেঁয়াজের দাম অনেক বাড়তি, পাইকারি বাজারে এক পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৫৫০ টাকা, সেটা কিনে এনে খুচরায় ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। দাম বেশি হওয়ায় পেঁয়াজের চাহিদা কম, বিক্রিও কম হচ্ছে।
তিনি বলেন, নতুন পেঁয়াজ সরবরাহ পর্যাপ্ত হলে আবার হঠাৎ কমে যাবে পেঁয়াজের দাম। সে কারণে আজ আর নতুন করে পেঁয়াজ আনিনি। কারণ ১১০ টাকা কেজিতে কিনে আনার পর আবার যদি পেঁয়াজের দাম কমে যায়, তাহলে লোকসানে পড়ে যাব। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর আমাদের ব্যবসা অনেক কমে গেছে, খুব কম বিক্রি হয়। আগে যদি কেউ ২ কেজি পেঁয়াজ কিনত, এখন দাম বেড়ে যাওয়া কেনে এক কেজি। আবার যিনি এক কেজি কিনতেন তিনি এখন কেনেন আধা কেজি। তবে আশা করা যায় এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করবে।
এদিকে পেঁয়াজের বাড়তি দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তারা বাজার মনিটরিং না থাকাকেই দাম বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করছেন।
রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে আসা রফিকুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা বলেন, যখন যে পণ্যের দাম বাড়াতে ইচ্ছে হবে ব্যবসায়ীরা সেটার দাম বাড়িয়ে দেবে। আমরা ক্রেতারা তাদের কাছে জিম্মি। আজ ১০ দিন ধরে পেঁয়াজের এমন চড়া দাম অথচ বাজার মনিটরিংয়ের কোনো বিষয়ই আমরা দেখতে পাচ্ছি না। চড়া দামে পেঁয়াজ কিনে খেতে হচ্ছে। সাধারণ ক্রেতাদের কথা কি কেউ ভাববে না। পেঁয়াজের দাম যারা এমন চড়া করেছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনলে অন্য অসাধু ব্যবসায়ীরাও এভাবে দাম বাড়ানোর সাহস পাবে না। একজন সাধারণ মানুষ, নিম্নআয়ের মানুষের কি ১২০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কেনা সম্ভব? প্রতিটি জিনিসের দাম যাচ্ছে বাড়তি, অথচ বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখছি না।
ট্রেডিং কর্পোরেশনের অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার জানান, গতকাল (রোববার) বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১১০ টাকায়। গত মাসে এ পেঁয়াজের দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। গত বছর এ সময়ে বাজারে পেঁয়াজ প্রতি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে।
এএসএস/এসএসএইচ