ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে অযৌক্তিক করের চাপ তৈরি হলে এনবিআর তা বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। একইসঙ্গে কর ছাড়ও ধাপে ধাপে কমানো হবে।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক বাজেট আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ, ব্যাংক, বীমা ও লিজিং ও মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধিদের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ কালে বিভিন্ন খাতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সরকারের রাজস্ব বাড়াতে হবে। এজন্য প্রতিষ্ঠান ও শিল্পগ্রুপগুলোকে শুল্ক-কর সহায়তা বা করছাড়ের নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের ওপর করনেট বৃদ্ধির একটা চাপ আছে। ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে ছাড়ের দাবি জানালেও তারাই আবার কর জিডিটি অনুপাত নিয়ে এনবিআরের সমালোচনা করেন। তারা বলেন বাংলাদেশে সবচেয়ে কম কর-জিডিপি অনুপাত। সেজন্য কর ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনায় করতে হবে। কর ছাড়ের পরিমাণ ধাপে ধাপে কমানো হবে।

মুনিম বলেন, কোথায়-কোথায় আমাদের কর ছাড় আছে, কেনো আমরা এই সুবিধা দিচ্ছি এবং তার ফল হিসেবে আমরা কি পাচ্ছি সেগুলো খুঁজে বের করছি। সেখানে কোথায় আমাদের কর ছাড় দেওয়া প্রয়োজন সেটা ধাপে ধাপে দেখতে হবে, সেগুলো আমরা খুঁজে বের করছি। পাশাপাশি কর আদায় বাড়াতে আমাদের করজাল বাড়াতে হবে। তবে ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে অযৌক্তিক করের চাপ তৈরি হলে এনবিআর সেটা বিবেচনা করবে।

ঋণ ও ডিপোজিটের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ (পিএসআর) দেওয়ার নিয়ম ভালো সিদ্ধান্ত হলেও ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা  এবং ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডে পিএসআর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন এই দাবি উপস্থাপন করেন।

সেলিম রেজা বলেন, ঋণ ও ডিপোজিটের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ (পিএসআর) দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছিল, সেটা ভালো সিদ্ধান্ত। সিএমএসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পিএএসআর বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। গ্রামে ছোট বা মাঝারি আকারে ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার জন্য পিএসআর জমা নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে তারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে ঋণে আগ্রহী হচ্ছে।

তিনি বলেন, সিএমএসএমই খাতে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ও ক্রেডিট কার্ডে ৫ লাখ পর্যন্ত ঋণ প্রদানের জন্য পিএএসআর প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া ব্যাংকে মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে পিএসআর জমা দেওয়া নিয়ম থাকায় অনেকে বাইরে টাকা রাখছে। এজন্য মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রেও পিএসআরের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। জিরো কুপন বন্ডে ট্যাক্স সুবিধা দেওয়ার ও সিএসআরকে অনুমোদিত ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করার জন্যও প্রস্তাব দেন তিনি।

অন্যদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, ব্রোকারদের এক লাখ টাকার ট্রেডের বিপরীতে ৫০ টাকা ট্যাক্স নেওয়া হয়। যা আগে ছিল মাত্র ১৫ টাকা। করোনা পরবর্তী বাজার পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এই ট্যাক্সের পরিমাণ কমানোর জন্য বলেন তিনি। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট করহার কমানোর প্রস্তাবও দেন তিনি।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হ্রাস ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানি করের হার বাড়ানোর দাবি জানান। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দ্বৈতকর লাঘব ও মূলধনি লাভের ওপর কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। প্রাক বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশন কর্পোরেট করহার কমিয়ে আনা, কৃষি বীমা ও গবাদিপশুর বীমা, অনলাইন ভিত্তিক বিমার প্রিমিয়াম থেকে ভ্যাট ও কর্পোরেট করহার প্রত্যাহারের দাবি জানান।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ৬ টি লক্ষ্য নিয়ে ৯ টি প্রস্তাবনা দেয়। তাদের লক্ষ্যগুলো হলো- তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি করা, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর পণ্য বৈচিত্রকরণে সহায়তা, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারী বৃদ্ধি, একটি কার্যকরী বেসরকারি বন্ড মার্কেট প্রস্তুত, পুঁজিবাজারের জন্য কার্যকর মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিস তৈরি করা, বাংলাদেশের অর্থিনীতি সমসাময়িক পিয়ার কান্ট্রিগুলোর সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে মার্কেট ক্যাপ-জিডিপি রেসিও বৃদ্ধি করা।

আর প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল- লভ্যাংশ করের ওপর দ্বৈতকরের বিধান প্রত্যাহার করে লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত ঘোষণা করা। তালিকাভুক্ত  ও অতালিকাভুক্ত কম্পানির কর হারের ব্যবধান কোনো শর্তছাড়া ১০ শতাংশ করা, নির্ধারিত বার্ষিক মোট নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগের সীমা ৩৬ লক্ষ টাকার স্থলে মোট ব্যাবসায়িক টার্নওভারের ১০ শতাংশ করা, এসএমই ও অল্টারনেটিং ট্রেডিং বোর্ডের (এটিবি) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির প্রথম তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া, করমুক্ত আয়ের এ সীমা ৫ লাখে উন্নীত করা।

এছাড়া বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশন কর্পোরেট কর হার কমিয়ে আনা, কৃষি বীমা ও গবাদিপশুর বীমা, অনলাইন ভিত্তিক বিমার প্রিমিয়াম থেকে ভ্যাট ও কর্পোরেট করহার প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

প্রাক বাজেট সভায় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ ও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডে রিটার্ন জমার প্রমাণ (পিএসআর) প্রত্যাহারের দাবি জানায় ব্যাংকাররা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে ব্যাংকের কর্পোরেট আয়করের হার ৩০ শতাংশ হ্রাস করা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল ও স্বীকৃত আনুতোষিক তহবিল এর অর্জিত আয়ের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করা, জিরো-কুপন বন্ডে বিনিয়োগের জন্য কর প্রণোদনার আওতায় ব্যাংকগুলিকে নিয়ে আসা ইত্যাদি।

আরএম/পিএইচ