অর্থ সংকটে রয়েছে সরকার। ফলে সার ও বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ভর্তুকি দায় মেটাতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে ‘বিশেষ বন্ডের’ মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বন্ডের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের ধারণ করা বিক্রয়যোগ্য বন্ডের পরিমাণ নির্ধারণ শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে হিসাবায়নের বাইরে থাকবে ‘বিশেষ বন্ড’। একই সঙ্গে এসব বন্ড ম্যাচিউরিটির পোর্টফলিওর ক্ষেত্রেও বন্ডের পরিমাণ নির্ধারণের হিসাবায়নের বাইরে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

ফলে এসব বন্ড প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকের (ব্যাংক পিডি) এইচএফটি বা হেল্ড ফর ট্রেডিং সিকিউরিটিজের বাইরে থাকবে। আর নন প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকের ক্ষেত্রে এসব বন্ড এইচটিএম বা হেল্ড টু ম্যাচিউরিটির পোর্টফলিওর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের হিসাবের বাইরে থাকবে। এ সুবিধার ফলে এখন ব্যাংকগুলো তাদের ইচ্ছেমতো এইচএফটি বা এইচটিএম বিশেষ বন্ড রাখতে পারবে।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন’ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এমন নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের সার ও বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ বিভিন্ন ব্যাংকের অনুকূলে ইস্যু করা ‘বাংলাদেশ সরকার স্পেশাল পারপাস বন্ড’ ফাইন্যান্সিয়াল ও রেগুলেটরি রিপোর্টিংয়ের সময় প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলোর (পিডি ব্যাংক) ন্যূনতম হেল্ড ফর ট্রেডিং সিকিউরিটিজের হিসাবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকের মোট ধারণ করা সিকিউরিটিজের হিসাবায়নে বাইরে থাকবে। নন প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকের হেল্ড টু ম্যাচিউরিটির পোর্টফলিওর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের হিসাবের বাইরে থাকবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন খাতের ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ করতে চলতি মাস থেকে বিশেষ বন্ড ছাড়ছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, সারের ভর্তুকি বাবদ গত জুন পর্যন্ত সরকারের কাছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) পাওনা ৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ভর্তুকি বাবদ আরও বকেয়া যোগ হয়েছে।

যথাসময়ে অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় সরকারি চার ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এতে করে খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কারণে ব্যাংকগুলো ইউরিয়া সার আমদানির নতুন এলসি খুলতে চাচ্ছে না। অন্যদিকে অর্থ পেতে বারবার বিসিআইসি চিঠি দিচ্ছে। কিন্তু সরকারের কাছে পর্যাপ্ত নগদ টাকা না থাকায় অর্থ ছাড় করতে পারছে না।

অন্যদিকে, বিদ্যুতের মূল্য বাবদ সরকারের কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মালিকদের পাওনা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি, টাকায় যা প্রায় ২৩ হাজার কোটি। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ) এ পরিমাণ টাকা চাইলেও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে টাকার অভাবে সার ও বিদ্যুতের দেনা মেটাতে বাধ্য হয়ে বিশেষ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে দায় পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে পাঁচ ব্যাংককে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ড দেওয়া হয়েছে। এই বন্ডের বিপরীতেই টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর মধ্যে ১৮০ দিন মেয়াদের জন্য আইএফআইসি ব্যাংককে ৪৫৯ কোটি টাকা ও সিটি ব্যাংককে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুতের দেনা শোধে বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকের অনুকূলে আরও ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছেড়েছে সরকার।

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৪০টি ব্যাংকের অনুকূলে ২৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, তার মধ্যে সার ও বিদ্যুৎ খাতে ইতোমধ্যে এক-তৃতীয়াংশের মতো ছাড়া হয়ে গেছে।

এসআই/এসকেডি