ঐতিহ্যবাহী শ্যামবাজার থেকে তোলা ছবি

বিট্রিশ শাসনামল থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শ্যামবাজার। এখানে রাস্তার দুইপাশে রয়েছে পেঁয়াজ, আলু, রসুন, মরিচ, হলুদ, আদা ইত্যাদির আড়ৎ। সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনাল দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে শ্যামবাজারের আড়ৎদার ও আমদানিকারকরা কাঁচাবাজার আনেন। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা আসে। বর্তমানে ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে বাজারটি পরিচালিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, লালকুঠি ঘাট ও ফরাশগঞ্জ রাস্তার দুইপাশে জিরা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, শুকনো মরিচ, হলুদ, আলু ইত্যাদি পণ্যের বিভিন্ন আকারের বস্তা থরে থরে সাজানো। সারাদিন ট্রাক, পিকআপ, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান, রিকশা রাস্তার ওপর রেখে মালামাল ওঠানামা চলছে। 

এখানে রাজশাহী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে পান। সদরঘাট থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত পানের আড়ৎ রয়েছে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গা পান নিয়ে যান। 

শ্যামবাজারে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে রয়েছে সবজির আড়ৎ। নদীপথে বরিশাল, পিরোজপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে লঞ্চ, ট্রলার ও বিভিন্ন পরিবহনে করে শসা, টমেটো, ঝিঙা, পটল, করলা, বেগুন, কচু, কাঁচাকলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, কলমি শাক, কচুর লতি, মূলা শাক, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সবজি আসে। সকালবেলা এখানে ভিড় করে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা। তারা আবার এখান থেকে কিনে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠায়। 

রাত গভীর হলে পরিবহন থেকে পণ্য আড়তে সরবরাহ করা হয়। আবার সকাল হলে হাঁকডাকের মধ্যে পণ্য বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। ট্রাক, লঞ্চে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্য বোঝাই করে ভিড়তে থাকে ১৫০ বছরের পুরনো শ্যামবাজারে। 

মালামাল ট্রাক থেকে নামিয়ে-উঠিয়ে শ্রমিকরা মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করেন এখানে। যদিও এটি বাজারের অবস্থার ওপর নির্ভর করে কমে-বাড়ে। এখানে সকাল হলেই মহাজন, পাইকার, খুচরা বিক্রেতারা পণ্যভেদে কমিশনের ভিত্তিতে কেনাবেচা করেন। 

স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাইকারিতে পেঁয়াজ, আলু পাল্লা হিসেবে বিক্রি করা হয়। এক পাল্লায় ৫ কেজি ধরা হয়। 

১ নং রোডে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় ঘেঁষে রয়েছে আমলকি, জাম, আখ, আনারস, আমড়া, পেয়ারা, জলপাই ও অন্যান্য ফলমূল। নদীর পাড়ের রাস্তার বিপরীত পাশে পাওয়া যায় আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বিভিন্ন মসলা। নদীর পাড় ঘেঁষে বিভিন্ন রকম শাকসবজির বাজার বসে। এই বাজারে ৩০০ থেকে ৩৫০টি আড়ৎ রয়েছে। বাজারে ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো আমদানিকারক আছেন। বাজারে বড় কয়েকটি গুদামঘর রয়েছে। এর মধ্যে সিদ্দিক বাণিজ্যালয়, মহানগর আড়ৎ, শাহজালাল আড়ৎ ইত্যাদি সুপরিচিত। 

বাজারে বড় কোনো মাছের আড়ৎ না থাকলেও অনেক ধরনের মাছ এখানে বিক্রি হয়। পাঙ্গাশ, রুই, মৃগেল, কাতল, ইলিশ, চিতল, চিংড়ি, পাবদা, ট্যাংরা, বোয়াল, কার্প জাতীয় মাছের দেখা মেলে রোজ।

জাহাঙ্গীর ট্রেডার্সের মালামাল দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পণ্যের দাম স্বাভাবিক আছে। তবে ক্রেতা কমে গেছে। আগে সকালবেলা যেরকম ক্রেতা আসতো তার চেয়ে অনেক কমে গেছে এখন। কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, কেরানীগঞ্জে পাইকারি বাজার গড়ে ওঠার কারণে ঢাকার অন্যান্য অঞ্চলের আড়ৎদাররা শ্যামবাজারে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। 

ইউনাইটেড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন বলেন, গত এক বছর ধরে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। এখন কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, জিঞ্জিরাসহ বিভিন্ন জায়গায় আড়ৎ হওয়ার কারণে ক্রেতা কমে গেছে। তবে পেঁয়াজে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। আদা, রসুন, হলুদ, লাল মরিচের বিক্রি কম। 

এইচকে