অব্যাহত থাকবে অভিযান
বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়াবে সরকার
প্রতিবেশী দেশ ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়ার পর দেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাতারাতি বেড়ে গেছে কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে জোর দিচ্ছে সরকার। এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানও অব্যাহত রাখা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের ঘোষণার পর হঠাৎ পেঁয়াজের মূল্য এত বেড়ে যাবে তা চিন্তায়ও ছিল না। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে এমনটি করেছেন। দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকল্প দেশ থেকে আমদানির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম হঠাৎ এত বেড়ে যাবে, এটা চিন্তা করিনি। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা এটা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে জোর দিচ্ছি। তবে এজন্য কিছুটা সময় লাগবে।’
কোন কোন দেশ থেকে আমদানি করা হবে? জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিশর ও চীন। এর মধ্যে মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। তবুও চেষ্টা করা হবে। কারণ মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনা সহজ হবে, পরিবহনের ক্ষেত্রে।’
তিনি বলেন, ‘চীন ও পাকিস্তান থেকে কিছু পেঁয়াজ ইতোমধ্যে আমদানি হচ্ছে। এখন আরও বেশি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমদানি ইস্যুতে ব্যবসায়ীরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।’
অব্যাহত থাকবে অভিযান
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। যেখানে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগে বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা আর দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অনিয়মের অভিযোগে সারা দেশে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আজ রোববারও অভিযান পরিচালনা করেছে সংস্থাটি।
দ্বিতীয় দিনের অভিযানে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রিসহ অনিয়মের অভিযোগে সারা দেশে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন
আগে এলসি খোলা ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আনতে চিঠি
পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে সেখান থেকে বাংলাদেশে ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়। এখন এই পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার ব্যাপারে নড়েচড়ে বসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাসকে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগে বেসরকারিভাবে ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা আছে। সেগুলো যাতে দ্রুত ছাড়া হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে : কৃষি মন্ত্রণালয়
এদিকে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
রোববার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতি বছর মুড়িকাটা পেয়াঁজ আবাদ হয় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ টন। এই পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করেছে এবং বাজারে থাকবে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। এরপর মূল পেয়াঁজ আসা শুরু হবে এবং উৎপাদন হতে পারে প্রায় ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন।
আরও পড়ুন
এটা ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল আচরণ নয়
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল আর দেশে একদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেল। এটা ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল আচরণ নয়।’
একদিনের ব্যবধানে দাম ৮০ টাকা বাড়ে কীভাবে– এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘যিনি একদিন আগে ১২০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করলেন, পরদিন কীভাবে সেটার দাম ২০০ টাকা হয়ে গেল? দাম বাড়তে তো সময় লাগার কথা। ব্যবসায়ীরা বাড়তি লাভের আশায় নীতিহীন কাজ করলেন।’
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘নিত্যপণ্যের সংকট তৈরি হলেই অনেক ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিয়ে থাকেন। গতকাল (শনিবার) হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে গেছে। এটা অবশ্যই দায়িত্বশীল আচরণ নয়। ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে দেশের জনগণের জন্যই ব্যবসা।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাভ ছাড়া তো ব্যবসা করবেন না। কিন্তু যে পণ্যের মূল্য ১২০ টাকা, এক রাতের মধ্যে তা ২০০ টাকা কীভাবে হয়? ভারত রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে মাত্রই ঘোষণা দিয়েছে। পরদিনই তো দাম বাড়তে পারে না।’
এসএইচআর/এসএসএইচ