নামেই দাম নির্ধারণ, ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস
সকাল-সকাল রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে গরুর মাংস কেনার উদ্দেশ্যে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম। কিন্তু এখানে এসে এক মাংস ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার বাধে বাকবিতণ্ডা। কারণ— মাংস বিক্রেতা প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম চাচ্ছেন ৭০০ টাকা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে ক্রেতা জেনে এসেছেন, চলতি মাসে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম থাকবে ৬৫০ টাকা। মূলত গরুর মাংসের দাম কেন্দ্র করেই বাকযুদ্ধে জড়ান ক্রেতা-বিক্রেতা।
খোরশেদ আলম বলেন, খবরে-টিভিতে দেখেছি মাংস ব্যবসায়ী সমিতি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা, অথচ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ৭০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছেন। মাংস ব্যবসায়ী সমিতির দাম নির্ধারণ কি নামে মাত্র? কেউ তো নির্দেশনা মানছে না, তারা তো সেই ৭০০ টাকায় বিক্রি করছে।
বিজ্ঞাপন
শুধু খোরশেদ আলম নন, বাজারে আসা বেশিরভাগ সচেতন ক্রেতারা মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দাম নিয়ে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যারা গরু কিনে বা মাংস কিনে এনে স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করছে তারাই জানে— ৭০০ টাকায় বিক্রির পরও লস হয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করার কোনো উপায় নেই আমাদের। বেশি দামে কিনে এনে ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি করলে আমাদের আর ব্যবসা করা লাগবে না।
গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) মোহাম্মদপুরে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সম্মিলিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়— বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী ঢাকায় ৬৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি হবে।
মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মোর্তজা মন্টু বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীতে এক মাসের জন্য ৬৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি মাসে গরু কেনাকাটার ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হবে। একমাস পর আবার বসে দাম পুনরায় নির্ধারণ করা হবে।
একই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, আগামী একমাস শর্তসহ ৬৫০ টাকা করে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা একমাস পর চেষ্টা করব যেন এটিকে কমিয়ে ৬০০ টাকা করা যায়। আমাদের ভোক্তার চাহিদাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। গরুর খামারিরা যদি দাম কমায় তাহলে গরুর মাংসের দাম কমানো সম্ভব। ১ কেজি মাংসের মধ্যে ৭৫০ গ্রাম মাংস ২০০ গ্রাম হাড্ডি ও ৫০ গ্রাম চর্বি থাকতে হবে। ভোক্তারা চাইলে তারা আলাদা করে মেপে তাদের মাংস ক্রয় করতে পারবেন।
শুক্রবার ছুটির দিনে গুলশানের মতো রাজধানীর আরেক বাজার মগবাজারেও মাংস বিক্রি নিয়ে একই পরিস্থিতি দেখা যায়।
মাংস কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, খবরে শুনেছি মাংসের দাম থাকবে ৬৫০ টাকা কেজি। কিন্তু বাজারে এসে সত্যতা মিলছে না। সব দোকানেই তারা ৭০০ টাকা আবার ৭২০ টাকা করে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে। এই দোকানিকে জিজ্ঞেস করলে বলছে— খবরে তো কত কিছুই দেখায়, আমাদের কেনা দাম বেশি, তাই ৭০০ টাকার কমে আমরা বিক্রি করতে পারছি না।
কিছুটা ক্ষুব্ধ এ ক্রেতা বলেন, আসলেই যদি দাম নির্ধারণ করা হয় তাহলে বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যারা বেশি দামে বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নইলে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে ব্যবসায়ীরা বেশি দাম আদায় করবে।
দাম নির্ধারণের পরও কেন বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি করছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে মাংস বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, ৭০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে আজ, বিশ্বাস করেন তবুও আমাদের লস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কেনা দাম পড়ছে বেশি, গরু কিনে আনা, কর্মচারী, দোকান ভাড়া সব মিলিয়ে অতিরিক্ত খরচ পড়ে যায়। এই অবস্থায় ৬৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করলে লস হয়ে যাবে অনেক। যারা দাম নির্ধারণ করেছে তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কিছুটা দাম কমিয়ে বর্তমানে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও আমরা ৭৮০ টাকা বিক্রি করেছি। বর্তমানে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছি, এর চেয়ে কমে আমরা বিক্রি করলে লসে পড়ে যাবো।
মগবাজারের আরেক মাংস বিক্রেতা আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, আগে আরও অনেক বেশি মাংসের দোকান ছিল, এখন তা কমে গেছে। এর কারণ গরুর কেনা দাম বেশি, যা মাংস করে বিক্রির সময় দাম পড়ে যায় অনেক বেশি। ফলে ক্রেতারা অনেক কমিয়ে দিয়েছিল গরুর মাংস কেনা। ইতোমধ্যে রাজধানীতে অনেক মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগেও আমরা ৭৮০/৮০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করেছি। মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা। কিন্তু আমাদের কেনা দাম বেশি পড়ে যায়, তবুও আমরা দাম কমিয়ে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছি। এতেও লস থেকে যাচ্ছে। গরুর দাম বাড়তি না হলে, পথে পথে খরচ কমে গেলে হয়ত গরুর মাংসের দাম আরো কমানো যাবে।
এএসএস/এমজে