বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের আয়ের ওপর কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানটির নেওয়া প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর ২৭.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। সম্প্রতি তা অনুমোদনও হয়েছে বলে জানা গেছে। দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।  অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

এনবিআরের সারসংক্ষেপ সূত্রে জানা যায়, প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিল ও গ্র্যাচুইটি বা আনুতোষিক তহবিল গঠনের মাধ্যমে চাকরিজীবীদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা হয় এবং আর্থিক নিরাপত্তার ক্ষেত্র তৈরি হয়। যা দেশের মোট সঞ্চয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের তহবিলগুলোর আয়ের ওপর করহার ২৭.৫০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ হারে আরোপিত হলে তহবিলসমূহের সুবিধাভোগী বেসরকারি চাকরিজীবীদের ওপর অতিরিক্ত করভার লাঘব হবে। 

এতে আরও বলা হয়, আয়কর আইন, ২০২৩ (২০২৩ সনের ১২ নং আইন) এর ধারা ১০২ অনুযায়ী স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল ও পেনশন তহবিলের অর্থ সঞ্চয়ী আমানত খাতে বিনিয়োগের সুদ/মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। এ ছাড়াও, আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ১০৫ মোতাবেক অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল বা পেনশন তহবিল বা গ্র্যাচ্যুইটি তহবিল বা স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল বা শ্রমিক স্বার্থ অংশগ্রহণ তহবিলের অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্রের ওপর প্রাপ্ত মুনাফা প্রদানকালে ১০ শতাংশ হারে কর কর্তন করতে হবে।

এতে আরও বলা হয়, অর্থ আইন, ২০২৩ এর অনুচ্ছেদ খ এর দফা ৪ অনুযায়ী তহবিল এর আয়ের উপর ২৭.৫০ শতাংশ হারে কর প্রযোজ্য হবে। তবে সকল প্রকার আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার অধিক ও বার্ষিক সর্বমোট ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে সকল প্রকার ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে করহার উক্ত আয়ের ৩০ শতাংশ হবে। অর্থাৎ অনুমোদিত ভবিষ্য, আনুতোষিক, বার্ধক্য এবং পেনশন তহবিল এর লেনদেন সম্পূর্ণরূপে আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে সংঘঠিত হওয়ায় এ ধরনের তহবিল থেকে উদ্ভূত আয়ের ওপর করের হার ২৭.৫ শতাংশ প্রযোজ্য হবে।

যেহেতু প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিল ও গ্রাচুইটি বা আনুতোষিক তহবিল দেশের মোট সঞ্চয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাই এ ধরনের তহবিলের আয়ের ওপর করহার ২৭.৫ শতাংশের স্থলে ১৫ শতাংশ হারে আরোপিত হলে তহবিলের সুবিধাভোগী বেসরকারি চাকরিজীবীদের ওপর অতিরিক্ত করভার লাঘব হবে।

এর আগে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিল ও গ্র্যাচুইটি বা আনুতোষিক তহবিলের ওপর কর হার কমাতে এনবিআরে আবেদন করে বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আবেদনে বেসরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বৈষম্যের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।

গত জুনে পাস হওয়া নতুন আয়কর আইনে ট্রাস্ট ও তহবিলকে (প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটি ফান্ড) কোম্পানি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এর ফলে বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডকে নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ রিটার্ন দাখিল এবং ২৭. ৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। যদিও সরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডকে করের আওতামুক্ত রেখে এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে। পুরোনো আয়কর আইনে সরকারি-বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ড করের আওতামুক্ত ছিল।

আরএম/এনএফ