পেঁয়াজ উঠলো ১৫০ টাকায়, কমেনি আলুর দাম
লাগামহীন গতিতে ছুটছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহ না যেতেই কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ভালোমানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। আমদানির খবরেও কমেনি আলুর দাম। আগের বাড়তি দামে মানভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
বুধবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, রামপুরা, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকার বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে দামের এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
এলাকাগুলোর বিভিন্ন সবজি দোকান, মুদি দোকান ও রাস্তায় ভ্যানে পেঁয়াজ-আলু বিক্রি করতে দেখা গেছে। দেখা যায়, আকার ও প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা দামের পার্থক্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ ও আলু। মুগদায় পেঁয়াজ বিক্রেতা কালাম মিয়া জানান, ছোট আকারের দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা, আর আকারে বড় চকচকে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। দুইদিন আগে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, আর এক সপ্তাহে আগে বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। তার হিসাবে গত ৫ দিনে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। আলুর দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। এখন আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা।
আরও পড়ুন
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজিতে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি।
পেঁয়াজের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে দাবি করলেন মুদি ব্যবসায়ী আল আমিন। তিনি জানান, আজকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১৪০ টাকা। আলু আগের কেনা একটু কাটা বেশি তাই ৬০ টাকা। তবে বাজারে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করছে। ডিমের দাম জানতে চাইলে বলেন, গত কয়েকদিন ডিমের দাম বাড়েনি আগের তুলনায় ডজনে ৫ থেকে ৬ টাকা কমেছে। আজকে ডিমের ডজন ১৫৫ টাকা বিক্রি করছি।
মুগদা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা নাসরিন বেগম জানান, সবসময় পাঁচ কেজি করে পেঁয়াজ কিনি এক মাস চলে যায়। আজকে কিনলাম দুই কেজি। গত মাসে পাঁচ কেজি যে টাকায় কিনেছিলাম আজকে দুই কেজি ওই টাকায় কিনলাম, ৩০০ টাকা নিল। গত সপ্তাহের ৫০ টাকার আলু আজকে ৭০ টাকা। কি কিনবো। আলু পেঁয়াজ তো প্রতিদিনই লাগে। সরকার এতো কিছু করে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে পারে না? পেতে ভাত না থাকলে সুন্দর রাস্তাঘাট দিয়ে কি সংসার চলবে। এখন হরতাল-অবরোধ চলছে এ কারণে পণ্যের দাম আরো বাড়বে-সমস্যায় পড়বো আমরা সাধারণ মানুষ, ক্ষোভ প্রকাশ করেন গৃহিণী নাসরিন।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, সবশেষ ৩১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। তাদের তথ্য বলছে এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ টাকা, আর আমদানি পেঁয়াজ ছিল ৮০ টাকা। আলু মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, যা এক সপ্তাহে আগে ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।
এর আগে ভারতের সরকার পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে রপ্তানির ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। যা ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যকর করা হয়েছে। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় গত শনিবার জানায়, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি টন পেঁয়াজের দাম ৮০০ ডলার হলে কেজিপ্রতি এর রপ্তানি মূল্য পড়বে ৬৭ রুপি। ফলে দেশের ভেতরে কোনো কোনো বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৮০ রুপি পর্যন্ত উঠে গেছে। এ অবস্থায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে গেলে বাড়তি দামে কিনতে হবে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিন্ডিকেট ও দাম নিয়ন্ত্রণে আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু করেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৮টি আবেদনের বিপরীতে ১৯ হাজার ৪০০ টন আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট যে, কোনোক্রমেই আলুর কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না। ৬০ টাকা, ৭০ টাকা ও ৮০ টাকা আলুর কেজি হবে কেন? মন্ত্রী বলেন, এক কেজি আলুতে যদি একজন ২০ থেকে ২৫ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেন, কেন সে এটা করবেন? মানুষের ক্রয় ক্ষমতার চিন্তা করে আমরা আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছি। আমার মনে হয়, এটা তাদের জন্য সহায়ক হবে।
এসআই/জেডএস