নতুন মজুরি ঘোষণার আগে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই : ফারুক হাসান
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, আগামী নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতনকাঠামো ঘোষিত হবে। এই অবস্থায় আমাদের শান্ত ও নিরীহ শ্রমিক গোষ্ঠীকে উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে। তা না হলে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার আগে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। কারণ ন্যূনতম মজুরি বোর্ডে শ্রমিক পক্ষ ও মালিক পক্ষ প্রতিনিধি এবং নিরপেক্ষ সদস্য কাজ করছেন।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) পোশাক শিল্পের শ্রম পরিস্থিতি বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সভাপতি এসব কথা বলেন। এসময় বিজিএমইএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমরা সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল আছি, বর্তমানে আন্তর্জাতিক কারণে স্থানীয়পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমাদের শ্রমিক ভাই বোনেরা কতখানি কষ্টে আছেন। তাদের এই কষ্টে আমরা প্রতিটি উদ্যোক্তা সমব্যথী। প্রতিটি শ্রমিক ভাই বোনদের সাধ্য অনুযায়ী ভালো রাখা আমাদের উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। শ্রমিকরা আমাদের এই পোশাক শিল্পের প্রাণ। তারা ভালো থাকলে শিল্প ভালো থাকবে।
‘আর তাই, শিল্পের আকাশে যখন অনিশ্চয়তার কালোমেঘের ঘনঘটা, তখন পোশাকখাতের শ্রমিক ভাইবোনদের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্য, পোশাকখাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড বর্তমানে ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনার জন্য কাজ করছে। আমরা আশা করছি, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে এবং সরকার নতুন যে বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে, আমরা পোশাক শিল্পের সব উদ্যোক্তা সেটিই মেনে নেব, শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন। নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
ফারুক হাসান বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, গত কয়েকদিন ধরে বহিরাগতদের উসকানিতে কিছু পোশাক কারখানায় শ্রমিক ভাই বোনেরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন, কারখানা ভাঙচুর করছেন, ফলে অনেক উদ্যোক্তা বাধ্য হচ্ছেন কারখানা বন্ধ করে দিতে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো— বহিরাগতদের উসকানির কারণে পোশাক কারখানার সঙ্গে বেশ কিছু লেদার কারখানা, ক্যামিকেলের গো-ডাউন, ফ্যাব্রিক্সের গো-ডাউন, দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের অবদানেই শিল্প বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছে। এমন কিছু করবেন না যাতে করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, ক্রেতাদের আস্থা বিনষ্ট হয়। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে করে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ ক্রেতারা শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর আপনারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা কাম্য নয়।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, মালিকরা যখন শিল্প ও অর্থনীতি সচল রাখতে, পোশাককর্মীদের কর্মসংস্থানের খাতটিকে সুরক্ষিত রাখতে, দেশে ফরেন রিজার্ভে অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেই এতসব ঘটনার পরও ধৈর্য সহকারে কারখানা চালু রাখছেন এবং সব সময়ে কারখানা চালু রাখার প্রত্যয় নিয়ে একনিষ্ঠভাবে পরিশ্রম করছেন, তখন কোনাবাড়ী এলাকায় বিজিএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠান এবিএম ফ্যাশন লিমিটেডে অগ্নি সংযোগের ঘটনা মালিকদের সব প্রচেষ্টাকে হতোদ্যম করে দেয়।
গত ২৬ তারিখে এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড ছুটি দেওয়ার ৩ ঘণ্টা পর বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী কারখানা ভাঙচুর করে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় কারখানা ছুটি দেওয়ার পর কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী হাতুড়ি, শাবল দিয়ে প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে প্রায় ২ ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় এবং কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে করে আগুনের ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কারখানার বাটন অপারেটর ইমরান মারা যান।
এমআই/এমএ