করোনার দ্বিতীয় ঢেউ : ১০ দিনে ৮ ব্যাংকারের মৃত্যু
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে কর্মরতদের আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। গত ১০ দিনে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে শতাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী সংক্রমিত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ জন। এছাড়া উপসর্গ দেখা দিয়েছে আরও সহস্রাধিক কর্মকর্তার শরীরে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জরুরি সেবা হিসেবে ব্যাংকগুলোয় কার্যক্রম চলছে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অফিসে যাওয়া-আসা এবং ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পরিপালন করা হয় না। সচেতনতার অভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ব্যাংকাররা। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। তাই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি অধিক কর্মী সমাগম ঠেকাতে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে জোর দেওয়া উচিত।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কায় আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ মারা গেছেন যমুনা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শরিফুল বারী মিল্টন। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে গত ২১ মার্চ তার করোনার পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮ সালে ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
৬ এপ্রিল মঙ্গলবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাহফুজুল ইসলাম (৪৮) নামে আরেক ব্যাংক কর্মকর্তা মারা যান। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। ৬ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মাহফুজুল ইসলাম উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের নাজগ্রাম গ্রামের মৃত জাকের আলীর ছেলে।
৫ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের গোপালপুরে করোনায় মারা যান ফৌজিয়া জেসমিন নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ফৌজিয়া জেসমিন অগ্রণী ব্যাংক জামালপুর শাখায় এজিএম পদে কর্মরত ছিলেন।
৫ এপ্রিল ভোরে অগ্রণী ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা মুহা. মুহিব্বুল্লাহ বাহার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি অগ্রণী ব্যাংক পাবনায় আঞ্চলিক কার্যালয়ে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের (২০০৪-০৫ সেশন) ছাত্র ছিলেন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে রোববার (৪ এপ্রিল) মধ্যরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মহিদুল হক মারা যান। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য তাকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যান তার পরিবারের সদস্যরা। কোথাও আইসিইউ বেড খালি না থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারেননি তারা। পরে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে বিনাচিকিৎসায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে মারা যান তিনি।
৩ এপ্রিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) সহকারী মহাব্যবস্থাপক শামীমা ফেরদৌস শিমুল। শামীমা ফেরদৌস শিমুল রাকাবের মনিটরিং শাখা প্রধানের দায়িত্বপালন করছিলেন। তিনি রাজশাহী নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।
৩১ মার্চ ভোরে নাটোরে নিজ বাসায় মারা যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ন্যাশনাল ব্যাংক নাটোর শাখার প্রথম নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম কনক। নাটোর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই কনকের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ ছিল। তিনি নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এর পর থেকে তিনি নিজ বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার ভোরে তিনি মারা যান।
৩০ মার্চ করোনায় মারা যান সিটি ব্যাংকের মিরপুর শাখার সিনিয়র অফিসার আতিয়া খানম। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আতিয়া খানম ১৮ বছর সিটি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।
এসআই/এসকেডি/জেএস