করোনায় ঋণের জালে ৬১ শতাংশ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী
করোনার প্রথম আঘাত কাটিয়ে উঠতে প্রায় ৬১ শতাংশ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ঋণের জালে আটকে পড়েছে। এরইমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তাদের আরও গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পরিচালনায় ‘কীভাবে অতিমারিকে মোকাবিলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক একটি খানা জরিপে এমন তথ্য উঠে আসে।
বিজ্ঞাপন
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। জরিপের ফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার সিনিয়র বিশ্লেষক ইশতিয়াক বারী।
জরিপের ফল অনুযায়ী, প্রায় ৭৯ শতাংশ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনও করোনার আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি। করোনা সংকটের সময় এই প্রান্তিক শ্রেণীর ৮০ শতাংশ পরিবার খাবার কিনতে খরচ কমিয়েছে। আর ৬৪ শতাংশের বেশি পরিবারকে খাদ্যবহির্ভূত খাতে খরচ কমাতে হয়েছে। আর প্রায় ৬১ শতাংশ পরিবার ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া নিজের গবাদিপশু বিক্রি করে, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে, সরকারি সহায়তা, সোনাদানা ও জমি বিক্রি করেও অনেকে জীবনধারণ করছেন।
কোভিড সংকট মোকাবিলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য একটি সামাজিক সংহতি তহবিল গঠনের সুপারিশ করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। সংস্থাটির আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, চলমান মহামারি বেশি বিপদে ফেলেছে প্রথাগত বিপন্ন গোষ্ঠীকে। এমনকি যারা আগে বিপন্ন ছিলেন না, তারাও সংকটে পড়েছেন। যেমন প্রবাসফেরত মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা।
তিনি বলেন, বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য দুই থেকে তিন বছরের একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করতে হবে। সরকারের সম্পদের জোগান দিতে একটি সামাজিক সংহতি তহবিল তৈরির সুপারিশ করেছেন তিনি। এতে সরকারের পাশাপাশি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা উচিত।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক পরিবার ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে। তাদের সুরক্ষা দিতে হবে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক হাজার ৬০০ খানার ওপর এ জরিপ করা হয়েছে। চর, হাওর, উপকূল, বস্তি, দলিত, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, প্রবাসফেরত, পিছিয়ে পড়া নারী এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপে উঠে এসেছে, করোনার আঘাত সামলাতে প্রথমে সঞ্চয় ভেঙেছেন এসব প্রান্তিক মানুষ। এরপর ঋণ করেছেন। তারা ভোগও কমিয়েছেন। প্রথমে খাবারে, পরে গৃহস্থালির খরচ কমিয়েছেন। কীভাবে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী করোনার সময় খরচ কমিয়ে টিকে ছিল, তা জরিপে উঠে এসেছে।
আরএম/আরএইচ