বাজারে সবজির দাম ক্রমেই বাড়ছে। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিই কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় চরমভাবে অস্বস্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যমআয়ের মানুষ। তারা ক্ষোভ ঝেড়ে বলছেন, মাছ-মাংস তো দূরের কথা এখন দু-বেলা পাতে সবজি দেওয়াও দায়।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে সিম। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বেগুন ও বরবটি। তার চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে গাজর ১৪০ টাকা ও টমেটো ১২০ টাকা। সেঞ্চুরির কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে (৮০ থেকে ৯০ টাকা) কচুরমুখি, কচুর লতি, করলা উচ্ছে ও করলা। চাল কুমড়া, লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পিস। এছাড়াও প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধা কপির দাম ৬০ টাকা। কাঁচা-কলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গরিবের সবজি বলে খ‍্যাত ধুন্দলের কেজি ৬০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ঢেঁড়স ও পটলও। অর্থাৎ ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজিই নেই বাজারে।

এক দশক ধরে পাঁচ সদস্য নিয়ে মহাখালীতে বসবাস করা পোশাক কারখানার কর্মী সামসুল আলম ঢাকা পোস্টে বলেন, এত কষ্টের দিন আগে কখনো পার করিনি। আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়ায় পরিবারের খরচ মেটাতে গত ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত গরুর মাংস কিনতে পারিনি। মাছ কিনেছি মাত্র ৮ থেকে ১০ দিন। এত দিন আমার সংসার চলছে ডাল-সবজিতেই। এখন সবজির যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে, সবজি খাওয়াও বন্ধ করে দিতে হবে। কীভাবে যে সংসার চালাবো সে চিন্তা করছি।

বাজারের এই পরিস্থিতির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মস্তোফা সবুজ নামের এক ক্রেতা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৬০ টাকা টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এক সপ্তাহ আগেও ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া ঢেঁড়স ও পটল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। বাজারে সব কিছুর দাম বাড়তি। খুব খারাপ অবস্থায় দিন পার করছি। আর কিছু দিন বাজারের অবস্থা থাকলে ঢাকা ছাড়তে হবে।

মধ্যবাড্ডা বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শিকদার আশরাফ বলেন, বাজারে এসে দেখলাম সব জিনিসের দাম বেশি। ঢেঁড়স ও মূলার কেজি দিন চারেক আগেও কিনেছে ৪০ টাকা কেজি। আজকে ৬০ টাকা নিচে দিচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছে। কিছু বলাও যাচ্ছেনা উল্টো বাজে ব্যবহার করছে। সরকারের উচিত বাজার মনিটরিংয়ে নজর দেওয়া।  

আরও পড়ুন>>সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম-আলু-পেঁয়াজ

একই বাজারে ক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, ৬০ টাকা নিচে কোনো সবজি নেই। সবকিছুর যেভাবে ঊচ্চমূল্য তাতে এমনিতেই তো মাছ-মাংস কেনার অবস্থা নেই। এখন ভর্তা-ভাত, সবজি খেয়ে থাকব সেটারও কঠিন হয়ে যাবে। আমরা নিম্নআয়ের মানুষ কতটা বিপদে আছি বলে বোঝানোর ভাষা নেই।

সাবিকুন্নাহার নামের আরেক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুব খারাপ অবস্থায় আছি। দাম বাড়ায় মাস তিনেক ধরে ডিম খাচ্ছি না। এখন সবজির দামও দ্বিগুণ। এখন সংসার চালানোই দায়। সরকার পেঁয়াজ, আলু, ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ বাজার মনিটরিং করার কাউকে দেখছি না। 

এদিকে দাম বাড়ার কথা স্বীকার করেন মহাখালী বাজারের ব্যবসায়ী সুমন পাটোয়ারী। তিনি অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই ঢাকা পোস্টকে বলেন, সব কিছুরই দাম বাড়ছে। আমরা কারওয়ান বাজার থেকে মাল কিনে এখানে বিক্রি করি। আমরা দাম বাড়াই না, যারা দাম বাড়ায় তাদের জিজ্ঞেস করেন কেন বাড়াচ্ছে।

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী সজিব ছারওয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাহিদার তুলনায় মালের সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম বেশি। আর কিছুদিন পরই বাজারে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করবে ফলে সবজির দামও কমে যাবে।

এমআই/এমএ