আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল অন্যদিনের চেয়ে বেশি। 

সকালে বাজারে দেখা যায় মাছ, সবজি, মুরগির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। মুরগির দোকানগুলোতে দেখা যায়— কেউ কিনছেন ব্রয়লার, কেউ দাম জানছেন সোনালি, কক, লেয়ার মুরগির। দোকানিরা জানান মুরগির পাশাপাশি গিলা, কলিজা, পা,  মাথার ক্রেতা আগের তুলনায় বেড়েছে।   

 দোকান থেকে যেসব ক্রেতা মুরগি কিনে কেটে নিয়ে এসব পা মাথা, গিলা কলিজাগুলো নেন না সেগুলোই মূলত একত্রিত করে পরে অন্য সাধারণ ক্রেতাদের কাছে মুরগির চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়। যারা দাম বেশির কারণে আস্ত মুরগি কিনতে  পারেন না, তারাই মূলত এগুলো কেজি দরে কিনে নেন। বাজারে এসব গিলা কলিজা, পা,  মাথা এক সঙ্গে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা করে। আর যদি কেউ শুধু গিলা কলিজা কিনতে চান সেক্ষেত্রে কিনতে হবে ১৫০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে শুধু পা আর মাথা মিলিয়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়।

রাজধানীর মহাখালী বাজারে মুরগির দোকানি খোরশেদ আলম বলেন, আগে এসব গিলা, কলিজা, পা, মাথা সারাদিনে জমিয়ে রাখতাম আর পরে এসে এসব কিনে নিয়ে যেত ঝাল-মুড়ি বিক্রেতারা। তারা গিলা-কলিজা দিয়ে মুড়ি বিক্রি করতো। কিন্তু মাঝখানে ব্রয়লারসহ সব মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার পর এসব গিলা, কলিজা, পা মাথার আলাদা ক্রেতা তৈরি হয়েছে। মূলত নিম্ন আয়ের মানুষরা এসব কিনে নিয়ে যায়। মুরগির মাংসের মতো রান্না করে বাসায় খায়। এখন এমন অনেক ক্রেতাই আছে যারা সরাসরি এসে এসব চায়। সারাদিনে ভালোই বিক্রি হয়। বর্তমানে বাজারে এগুলো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি।  আর শুধু গিলা কলিজা একসঙ্গে ১৫০ টাকা কেজি। এটি অবশ্য অনেকে নেন বাসায় বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য। এছাড়া শুধু পা আর মাথা একসঙ্গে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।

রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে মুরগি বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এক সময় কোনো গরিব অসহায় মানুষ এসে এগুলো চেয়ে নিয়ে যেত। আর এখন এগুলো নিয়মিত বিক্রি হয় কেজি হিসেবে। মূলত ব্রয়লার মুরগির দাম যখন থেকে বেড়েছে তখন থেকে এসব বিক্রি শুরু হয়েছে বেশি। এখন সব দোকানেই এগুলো রেখে পরে আলাদাভাবে বিক্রি করে। মূলত নিম্ন আয়ের মানুষরাই নিয়মিত এগুলো কিনে নিয়ে যায়। এখন এসবের আলাদা রকমের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।  

বেলায়েত হোসেন (ছদ্ম নাম) থাকেন কড়াইল বস্তিতে। তিনি টিএনটি মাঠ সংলগ্ন বাজার থেকে এক কেজি গিলা কলিজা, পা মাথা কিনেছেন। আজ দুপুরে তার ঘরে এটাই রান্না হবে। তিনি বলেন, মুরগির যে দাম এতে করে কেনা মুশকিল আমাদের মতো নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের। তাই মাঝে মাঝে এসব গিলা কলিজা, পা,  মাথা কিনে নিয়ে যাই। বাসায় ভুনা করে করে রান্না করলে খারাপ লাগে না। এসবের কেজি আজ কিনলাম ১২০ টাকা করে। তবে আগে অনেক কম দাম ছিল এসবের। এখন অনেক মানুষ এসব কিনে বলে দোকানদারও দাম বাড়িয়ে ১২০ টাকা কেজি করেছে। ঘরে মানুষ বেশি, তাই বেশি দাম দিয়ে আস্ত মুরগি কিনে পড়তা হয় না। তাই বাধ্য হয়ে গিলা কলিজা, পা মাথা এসব কিনে মুরগির গোস্ত খাওয়ার চাহিদা মেটাই।

ব্রয়লার ছাড়া অন্যান্য মুরগি নাগালের বাইরে 
বাজারে একমাত্র ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কম থাকলেও অন্যান্য সব মুরগির দাম অতিরিক্ত বেশি। ফলে বলতে গেলে ব্রয়লার ছাড়া সোনালি, লেয়ার, ককসহ অন্যান্য সব মুরগি সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।  

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, লেয়ার প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, কক মুরগি লাল ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি মুরগি প্রতি কেজি মানভেদে ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে এলাকাভেদে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর খাসি মানভেদে ১০০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী খাদেমুল ইসলাম বলেন, বাজারে একমাত্র ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কম আর বাকি সব ধরনের মুরগি আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। ব্রয়লার ছাড়া আমরা কোনো মুরগিই কিনতে পারি না। ১৮০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনেছি একটা, এটা দিয়েই মুরগি খাওয়ার শখ মেটাচ্ছি। দেশি মুরগি কেনার কথা তো স্বপ্নেও ভাবি না।

গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারের মুরগি বিক্রেতা রেজাউল করিম বলেন, মূলত ব্রয়লার মুরগির দাম কম থাকে বাজারে কিন্তু অন্যান্য মুরগির দাম আসলেই বাড়তি। যখন থেকে মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে তখন থেকেই অন্যান্য মুরগির দাম বেড়ে গেছে, আর কমেনি। বাড়তির দিকে রয়েছে সব মুরগির দাম। আগে সোনালী মুরগির দাম কম ছিল। তখন সোনালি মুরগি অনেক বিক্রি হতো। এখন দাম ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা, তাই বিক্রিও আমাদের অনেক কমেছে। আগে খাঁচি খাঁচি মুরগি বিক্রি করেছি প্রতিদিন। এখন দাম বাড়তি থাকায় ক্রেতা অনেক কমেছে, বিক্রি কমেছে, ফলে আমাদেরও ব্যবসা আর আগের মতো হয় না।

এএসএস/এনএফ