দেশের নাগরিকদের বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে (স্কিম) এখন পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজার নাগরিক যুক্ত হয়েছেন। গত ১৭ আগস্ট পেনশন স্কিম উদ্বোধনের পর থেকে এতে ব্যাপক সাড়া মিলছে। রোববার সকাল পর্যন্ত ৬ হাজার ৫০০ জন বাংলাদেশের নাগরিক কিস্তির টাকা জমা দিয়ে বিভিন্ন স্কিমে নিবন্ধন করেছেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র।

প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিম- এ চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। চালুর প্রথম দিনেই এতে ব্যাপক সাড়া মিলেছে।

১৭ আগস্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্য কমপক্ষে ৬ হাজার ১০০ জন সাইন আপ করেছেন। যাদের মধ্যে ৪৬৩ জন তাদের প্রথম কিস্তি জমাও দিয়েছেন। আর ১৮ আগস্ট রাত পর্যন্ত প্রথম কিস্তির টাকা জমা দিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ২ হাজার ৯৫০ জন নিবন্ধন করেছেন। যদিও সাধারণ নিবন্ধনের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়ন্ত্রণ) বিলকিস জাহান রিমি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিবন্ধন উৎসাহব্যঞ্জক। তবে আমরা শুধু রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু টাকা জমা দেননি সেই হিসাবটা করতে চাইছি না। যারা টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন নিয়েছেন, সেই সংখ্যাটা বিবেচনায় নিচ্ছি।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জমা হওয়া অর্থ কোন খাতে বিনিয়োগ হবে, মুনাফা আসবে কিভাবে বা গচ্চা যাবে না তো জমা হওয়া সঞ্চয়?- এসব প্রশ্নে তৈরি হয়েছে এ উদ্যোগের ধোঁয়াশা। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ মেয়াদী গবেষণার পরই চালু করা হয়েছে এ পেনশনের পুরো প্রক্রিয়া। এখানে অনিশ্চয়তার কিছু নেই।

পেনশন বিধিমালা বলছে, সর্বজনীন পেনশন প্রথায় যার যত টাকা জমা, মেয়াদ শেষে তার তত বেশি পেনশন। অন্যদিকে, স্বল্প আয়ের মানুষদেরও বিমুখ করবে না এ উদ্যোগ। যারা মাসিক ৫০০ টাকা জমাবেন, তাদের জন্য শুরু থেকেই থাকবে সরকারের আরও ৫০০ টাকার ভর্তুকি। সবমিলিয়ে, সবার জন্যই থাকছে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বাড়তি কয়েকগুণ মুনাফা।

অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পৃথিবীর বহুদেশেই চালু আছে জাতীয় পেনশন ব্যবস্থা। যেগুলো চলছে ঠিকঠাক। বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন খাতে জমা হওয়া অর্থ যাবে লাভজনক বিনিয়োগে, তা থেকে প্রাপ্ত মুনাফাই জমা হবে স্কিমের হিসাবে। ফলে বেগ পোহাতে হবে না খুব একটা। আর পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে। যা সর্বজনীন পেনশন আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাস করা হয়।

বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) বৃহস্পতিবার সকালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরই সবার জন্য সার্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত করা হয়।

উদ্বোধনের পর জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট- www.upension.gov.bd চালু করা হয়েছে এবং চারটি স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকে টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে দেশে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী, এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন গ্রাহক। চাঁদা পরিশোধের পর তিনি মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন ১৫ বছর।

সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আপাতত চার ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিম, অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম আর নিম্নআয়ের মানুষের জন্য রয়েছে সমতা স্কিম। এছাড়া পরবর্তী সময়ে শ্রমজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য আরও দুই ধরনের প্যাকেজ চালু করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

আরএম/এফকে